শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রাণ যায় যায় কীর্তনখোলার

অবিরাম নির্গত হচ্ছে কলকারখানা আর বাসাবাড়ির বর্জ্য

রাহাত খান, বরিশাল

প্রাণ যায় যায় কীর্তনখোলার

দখল আর দূষণে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা চলছে। খালের উৎসমুখগুলো দিয়ে অবিরাম নির্গত হচ্ছে কলকারখানা আর বাসাবাড়ির বর্জ্য। অন্যদিকে নদীর বিভিন্ন স্থানে চলছে দখলবাজির মহোৎসব। বন্দর কর্তৃপক্ষের হিসেবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার অবৈধ দখলদার থাকলেও তাদের উচ্ছেদে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই।

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। কালাবদর ও আড়িয়াল খাঁ নদের মোহনা থেকে শুরু হয়ে ঝালকাঠির নলছিটির সুগন্ধা নদীতে পতিত হয়েছে কীর্তনখোলা নদী। নগরীর রূপাতলী থেকে কালীবাবুর খেয়াঘাট পর্যন্ত ১০টি স্থানে অনবরত দূষণ হচ্ছে কীর্তনখোলা নদী। নগরীর মধ্যে থাকা শিল্প কলকারখানার বর্জ্য কোনো ধরনের পরিশোধন ছাড়া খাল হয়ে সরাসরি নামছে নদীতে। এ ছাড়া বাসাবাড়ির বর্জ্য এমনকি মানব বর্জ্য ড্রেন-খাল হয়ে মিশছে নদীতে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর রূপাতলী থেকে কালীবাবুর খেয়াঘাট পর্যন্ত ধান গবেষণা রোড খাল, সাগরদী খাল, চাঁদমারী খাল, ভাটার খাল, জেলখালসহ অন্যান্য খালগুলোর উৎস্য মুখ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন, মানববর্জ্য ও কলকারখানার বর্জ্য কীর্তনখোলা নদীতে পড়ছে। বহুমুখী কাঁচাবাজার এলাকা এবং পোর্টরোডের মাছ আড়ত থেকেও প্রচুর বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে নদীবন্দরে ঢাকা থেকে আগত এবং অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ থেকেও যাবতীয় বর্জ্য ঝাড়ু দিয়ে ফেলা হয় নদীতে। লঞ্চের মানব বর্জ্যও সরাসরি মিশছে নদীর পানিতে।

নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলন নামে একটি নাগরিক সংগঠন আগে নদীদূষণের ১০টি পয়েন্ট চিহ্নিত করে সিটি করপোরেশনকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু আজও পর্যন্ত খাল থেকে নদীতে বর্জ্য পড়া রোধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কীর্তনখোলা নদী দখল করার প্রতিযোগিতা চলছে প্রভাবশালীদের মাঝে। রূপাতলী দপদপিয়া পুরান ফেরিঘাট এলাকায় একটি ওষুধ কোম্পানি নদীর উত্তরপাশে সিসি ব্লক ফেলে পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলেছে। এ কারণে নদীর দক্ষিণ তীর ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়েছে। শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর নিচে পূর্বপ্রান্তে বালু ভরাট করে বিশাল এলাকা দখল করেছে প্রভাবশালীরা। ধান গবেষণা রোড এলাকায়ও নদীর তীরে ব্লক ফেলে বালু ভরাট করে বিশাল এলাকা অবৈধ দখল করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অবশ্য ত্রিশ গোডাউন এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নামে নদীর একাংশ জুড়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ওই বাঁধের কাজ বন্ধ রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে। নদীর একাংশ দখল করে নির্মিত বাঁধ অসম্পন্ন অবস্থায় থেমে আছে। বাঁধটি অপসারণের কোনো উদ্যোগ আজ পর্যন্ত নেয়নি কোনো কর্তৃপক্ষ। চাঁদমারী এলাকায়ও নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা। সবচেয়ে বড় অবৈধ দখল হয়েছে পলি ফেলে কীর্তনখোলার বুকে সৃষ্টি করা কৃত্রিম চর রসুলপুরে। দখল করতে করতে নদী বাঁকিয়ে ফেলেছে প্রভাবশালীরা। ওই চরে পাকা, আধাপাকা এবং খুপরি ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন তারা। নদীবন্দর থেকে বেলতলা খেয়াঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো করে দখল করেছেন কীর্তনখোলা নদীর তীর। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপপরিচালক আবদুর রাজ্জাক বলেন, নদী তীরের অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে শিগগিরই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, বিআইডব্লিউটিএ বন্দর এলাকায় থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সহযোগিতা করবে। নদীদূষণ বন্ধে পরিবেশ অধিদফতরকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে তাগিদ দেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।

সর্বশেষ খবর