শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

গণতন্ত্র সুশাসন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে

বিআইডিএসের সম্মেলনে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, গণতন্ত্র, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং উন্নয়নকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে একটির সঙ্গে অন্যটির সম্পর্ক খুবই নিবিড়। একটা ছাড়া অন্যটা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের পর রাজস্ব আদায় ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

গতকাল রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের বিভিন্ন সেগমেন্টে বক্তারা এসব পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের প্রতি। বিআইডিএস আয়োজিত তিন দিনের এ সম্মেলন চলবে কাল শনিবার পর্যন্ত। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় অত্যন্ত কম। জিডিপির মাত্র ৭-৮ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের হার নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেটিও বড় প্রশ্ন। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কা আছে। কেননা স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটলে রপ্তানিতে বড় ধরনের শঙ্কার সৃষ্টি হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আগামীতে যে সরকারই আসুক না কেন কার্যকর পদক্ষেপের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এতে বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যের অলস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এস আর ওসমানি। এ ছাড়া দিনব্যাপী ছয়টি সেশনে প্রায় আটটি গবেষণা পেপার উপস্থাপন করা হয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গরিব মানুষ সুশাসন ও ভোটের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা চায় উন্নয়ন ও ভাতের নিশ্চয়তা। সুশাসন ও ভোটাধিকার সুশীল সমাজের মাথাব্যথার কারণ হলেও সাধারণ মানুষের নয়। তারা টিউবওয়েল চায়, ভালো টয়লেট চায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে ভালো ওষুধ চায়। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতে যেতে পারে, তারা সেগুলোই চায়। তাদের চাওয়া আর নাগরিক সমাজের চাওয়ার মধ্যে ব্যাপক ফারাক। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, নির্বাচন দিয়ে একটি দেশের সব কিছু বিচার করা যায় না। বিষয়টি হলো সমাজের একটি বড় পরিবর্তনের জন্য কিছু করলে সেটি মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। উন্নত দেশে সবাই পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করে। আমাদের মতো দেশে পরিবর্তনকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। ফলে সহিংস ঘটনা ঘটে। অর্থনীতিতে নানা পরিবর্তন আসে, যা সমাজকে বা জনগণকে মেনে নিতে হয়। যখনই সমাজ এ পরিবর্তন মানতে চায় না তখন অস্থিতিশীল তৈরি হয়। অথচ পরিবর্তন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। সভাপতির বক্তব্যে বিনায়ক সেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের মন পাথরের মতো হয়ে যায়। এ জন্য গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ। এখন বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য বাড়ছে। এখন ভাবা দরকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে। জনগণ আগে উন্নয়ন চায় নাকি গণতন্ত্র চায় সেটির মতামত নেওয়া দরকার।

মূল প্রবন্ধে প্রফেসর এসআর ওসমানি বলেন, বিচারব্যবস্থা ও স্বাধীনতা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি নিশ্চিত করা অসম্ভব। আমরা যেহেতু দরিদ্র দেশ তাই আমরা উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। বিচার ও স্বাধীনতাকে পরের জন্য রেখে দিচ্ছি। সব মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা যদি সব মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন না করি তাহলে সমাজে বৈষম্য বাড়বে। যা অর্থনৈতিক বৈষম্যও বাড়াবে। এ বৈষম্য কমাতে আমাদের কাঠামোগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ দরকার। ধনীর সঙ্গে দরিদ্রের বৈষম্য আছে। ব্যাংক, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে। জেন্ডার বৈষম্য আছে। নারীদের সেভাবে লেবার ফোর্সে সুযোগ দেওয়া হয় না। আমাদের শ্রমশক্তি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় না।  ফলে এটা শুধু আমাদের বর্তমানকেই নয়, বরং ভবিষ্যৎকে বাধাগ্রস্ত করে।

অপর একটি অধিবেশনে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এগুলো হলো- মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে অনেক উচ্চস্তরে সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করা জরুরি। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা আরও জরুরি। 

এ অধিবেশনের সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত উল্টো রথে আছে। যেমন, ব্যাংকের পরিচালক একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি হতে পারবেন। এটি ঠিক নয়। এ ছাড়া সার্বিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা আছে। শঙ্কার অন্যতম কারণ হলো যদি স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে রপ্তানিতে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হবে। সেটা যেন না আসে সে ধরনের কোনো উদ্যোগও আমাদের চোখে পড়ছে না। যা খুবই উদ্বেগজনক ও হতাশার। আমাদের খুব দ্রুত একটা গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো এতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর