শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বছরে কোটি টাকার হাঁসের পালক রপ্তানি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

বছরে কোটি টাকার হাঁসের পালক রপ্তানি

হাঁসের পালক সাধারণত বর্জ্য ভেবে ফেলে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই পালক রপ্তানি করে বছরে কোটি টাকার ওপর আয় করছেন নওগাঁর রানীনগরের আবদুস সালাম নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উত্তরবঙ্গের তিনিই একমাত্র এ ব্যবসা করে আসছেন। এই হাঁসের পালক থেকে বিদেশে লেপ, তোশক, কম্বল ও বিছানার চাদরসহ শীতের কাপড়  তৈরি করা হয়। তার বাবা প্রয়াত মজিবর রহমান ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তের পর নাহিদ ফেদার এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি হাঁসের পালক রপ্তানি শুরু করেন। মুরগির ব্যবসার সুবাদে কলকাতায় যাতায়াত ছিল তার। সেখানকার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিদেশের বিভিন্ন পালক রপ্তানিকারকের সঙ্গে পরিচয় হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে হাঁসের পালক সংগ্রহে অন্তত ১০ হাজার কৃষক কাজ করতেন। এসব পালক বিভিন্ন দামে কিনে গুদামজাত করে ভারত, আমেরিকা, চীন, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতেন। ১৯৯৫ সালে মারা যান তার বাবা। এরপর ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। ওই বছর ১০ টন হাঁসের পালক রপ্তানির অর্ডার পেয়েছিলেন। তবে রপ্তানির জন্য বাছাই করা পালকগুলো বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হলে বড় ধরনের লোকসান হয়। ঋণগ্রস্ত হওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব। তখন থেকে ব্যবসা কিছুটা গুটিয়ে নেন। সময়ের ব্যবধানে কয়েক বছরের মধ্যে দেশীয় বাজারে আসতে থাকে অত্যাধুনিক পালক বাছাইয়ের মেশিন। কিন্তু আর্থিক সংকটে তা কিনতে পারেননি। তখন থেকে পালক রপ্তানিতে তার সহায়তা নিতে হয় ঢাকার এলিয়েন্স ফেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের। প্রতিষ্ঠানটির কাছে পাইকারি দামে পালক বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে রাজশাহীর মাধ্যমে চীনের একটি কোম্পানি তার পালকগুলা নিয়ে যাচ্ছে।

প্রতি কেজি পালক বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব পালক সংগ্রহ করছেন হাজারো হকার ও সাব এজেন্ট। প্রতি বছর প্রায় ৬৫-৭০ টন হাঁসের পালক সংগ্রহ করছেন। বাছাইয়ের পর বছরে ৬০ টন পালক প্রায় সোয়া কোটি টাকায় বিক্রি করেন। তিনি আরও বলেন, বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হাঁসের পালক প্রসেসিং মেশিন কেনার জন্য সরকারি সহযোগিতা পেলে এসব পালক দিয়ে নিজে থেকে পণ্যগুলো তৈরি করা যেত এবং তা সরাসরি রপ্তানির সুযোগ পেলে আরও কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হতো।

গোবিন্দপুর গ্রামের হাঁসের পালকের হকার মনসের আলী বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁসের পালক সংগ্রহ করে আগে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম কিন্তু এখন ১৫০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে থাকি। ১ কেজি পালক হতে ১৫টি হাঁসের পালকের প্রয়োজন হয়। এ ব্যবসা করে দীর্ঘদিন পরিবার চালাচ্ছি ভালোভাবে। ওই কারখানার দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যানেজার আলতাফ হোসেন বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে আজ অবধি এ কারখানায় ম্যানেজারের দায়িত্বে আছি। এখানকার রোজগার দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো আছি। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে লেখাপড়া করে। এক কথায় খুব ভালো আছি। নওগাঁ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার বলেন, উত্তরবঙ্গের একমাত্র হাঁসের পালকের ব্যবসা করেন আবদুস সালাম। হাঁসের পালক রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা। তার বাবাও এ ব্যবসা করেছেন। এখন তিনি হাল ধরেছেন। সেদিক বিবেচনায় তাকে স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানসহ উৎপাদিত পণ্য বিপণনে বিসিক সব সময় তার পাশে থাকবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর