শিরোনাম
শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখলদারের আপত্তিতে থমকে গেছে শ্যামাসুন্দরীর উদ্ধার অভিযান

নজরুল মৃধা, রংপুর

দখলদারের আপত্তিতে থমকে গেছে শ্যামাসুন্দরীর উদ্ধার অভিযান

দখল আর দূষণে রংপুর মহানগরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামাসুন্দরী খাল এখন নগরবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই পাড়ে আগাছা ও জঙ্গলের কারণে এটি মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে।

শ্যামাসুন্দরী খালে জরিপ করে ১৭০ জন অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদের জন্য খাল দখলদারদের নোটিসও দেওয়া হয়। কিন্তু ১১ জন দখলদার আপত্তি দেওয়ায় উদ্ধার অভিযান থমকে আছে। কতদিনে আপত্তির নিষ্পত্তি হবে, তা-ও জানে না কেউ। এ দখল কবে নাগাদ উচ্ছেদ হবে তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে রংপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ও ডিমলার রাজা জানকী বল্লভ সেন ১৮৯০ সালে তাঁর মা চৌধুরানী শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে খালটি পুনঃখনন করেন। এ খালটি কারও কারও মতে নদী। খালটির আগে নাম ছিল ঘোষ খাল। এটি ঘাঘট নদ থেকে শুরু করে ধাপ পাশারীপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সিপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জের মরা ঘাঘটের সঙ্গে যুক্ত হয়। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় খালটি নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। এর দুই ধার দখল হয়ে যাওয়ায় সংকীর্ণ হয়ে পড়ে খালটি। এখন সামান্য বৃষ্টিতেই গোটা শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

২০০৭ সালে তৎকালীন পৌরসভার অধীনে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। এতে খাল পুনঃখনন, গাইডওয়াল স্থাপন, জজ কোর্ট ও কেরামতিয়া জামে মসজিদের কাছে পার্ক স্থাপন অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্প চলাকালে স্বেচ্ছায় খাল পুনঃখননে আর্থিক সহায়তা করে আরডিআরএস, কেয়ারসহ বেসরকারি কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে কেরামতিয়া মসজিদসংলগ্ন খালের ১ কিলোমিটার পুনঃখনন ও পার্কের ফুটপাতের বেসমেন্ট নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালের শুরুতে দ্বিতীয় দফায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় শ্যামাসুন্দরী খালের সংস্কারকাজ। আংশিক বাস্তবায়নের পর রংপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনে রূপান্তর হয়। তখন খালটি সিটি করপোরেশন থেকে এলজিইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় নবনির্বাচিত মেয়র (প্রয়াত) শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু সংবাদ সম্মেলন করে শ্যামাসুন্দরীর সংস্কারকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন। এর পর শ্যামাসুন্দরীর উন্নয়নকাজ থমকে যায়। শ্যামাসুন্দরীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নগরবাসী বিভিন্ন সময় আন্দোলন ও দাবিদাওয়া তুলে ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে খালটির ১০ কিলোমিটার পুনঃখননের সিদ্ধান্ত নিয়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রকল্পের কাজও থমকে আছে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান দাবি করেন, শ্যামাসুন্দরী খাল উন্নয়নে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। দখলদারদের আপত্তি নিষ্পত্তি কতদূর- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিয়য়ে আমি কিছু জানি না।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।’

সর্বশেষ খবর