শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

থেমে আছে দুর্নীতির ৪৩৫ মামলার বিচার

মাহবুব মমতাজী

থেমে আছে দুর্নীতির ৪৩৫ মামলার বিচার

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাধারণ মানুষ যে হারে দুর্নীতির অভিযোগ করতেন, তা এখন কমে গেছে। ব্যাপকভাবে কমেছে দুদকের নিজস্ব অভিযানও। একই সঙ্গে ধীরগতি এসেছে দুর্নীতির মামলাগুলোরও। এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক

দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৩ উদযাপনের আয়োজন করেছে সংস্থাটি। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ’। দুদক জানিয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে থেমে আছে দুর্নীতির ৪৩৫টি মামলার বিচারকাজ।

 

সংস্থাটি ঘুষ গ্রহণকারী সরকারি কর্মকর্তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ফাঁদ মামলা পরিচালনা করেছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গ্রেফতারের একটি পরিসংখ্যানও দিয়েছে। কিন্তু এর পরের বছরগুলোতে গ্রেফতার কিংবা ফাঁদ মামলার কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। দুদকের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে গ্রেফতার হন ৩৮৮ জন। ২০১৭ সালে গ্রেফতার হন ১৮২ জন এবং ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রেফতার হন ৫৬ জন। সূত্র জানায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে দুর্নীতির ৪৩৫টি মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তবে এ সময়ে বিচার চলমান থাকা মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৮৮৭টি। সাজা হয়েছে ১৪১ জনের এবং খালাস পেয়েছেন ৬৪ জন। মোট নিষ্পত্তির সংখ্যা ২১৫টি। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দুর্নীতির মামলার সাজার হার ৬৫.৫৮ শতাংশ। অভিযান কম হওয়া এবং সাজা কম পাওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী দুদক কাজ করে। এখানে কাউকে বাদ দিয়ে অভিযান বা অনুসন্ধান করার সুযোগ নেই। নিয়মিতভাবে দুদক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান করে মামলা দেয় এবং মামলাগুলোতে সাজাও হচ্ছে।

দুদক সূত্র জানায়, দুর্নীতির নতুন অভিযোগ আমলে নিয়ে মাঠে নামার চেয়ে পুরনো অভিযোগের অনুসন্ধান, তদন্ত ও অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করতেই বেশি সময় কাটছে দুদকের। সংস্থাটির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৩৭৫টি মামলা নিষ্পত্তি হলেও এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত মামলা নিষ্পত্তির হার একেবারেই কম।

দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধি অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান কাজ শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। এরপর যুক্তিসংগত কারণ উল্লেখ করে আরও ৩০ দিন সময় নেওয়া যায়। তদন্তের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা ১৮০ দিন। পরে তা ৯০ দিন বাড়ানো যায়। দুদকের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার ৫২৪ টাকা মূল্যের সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে থাকা ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৬ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুদক বলছে, এই তিন মাসে আলোচিত সাত মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে রাজশাহীর উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দের বিরুদ্ধে এবং একই ধরনের অভিযোগে কেয়া কসমেটিকসের চেয়ারম্যান আবদুল খালেক পাঠান ও তাঁর পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর