সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ময়ূর

শহরকে ঘিরে থাকা নিরালা খাল, খুদের খাল, বাঁশখালী, হরিণটানা খাল সর্বত্রই দুই পাড় ভরাট করে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর, মার্কেট, অবৈধ স্থাপনা

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় ময়ূর

এভাবেই ময়লা-আবর্জনায় দূষণে গতিহারা খুলনার ময়ূর নদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দখল-দূষণে এখন মৃতপ্রায় পানি নিষ্কাশনে খুলনার ‘লাইফ লাইন’খ্যাত ময়ূর নদ। ময়ূরসহ সংযুক্ত ২২টি খালেও রয়েছে দখলদারদের আগ্রাসী থাবা। শহরকে ঘিরে থাকা নিরালা খাল, খুদের খাল, বাঁশখালী, হরিণটানা খাল সর্বত্রই দুই পাড় ভরাট করে তৈরি হয়েছে বাড়িঘর, মার্কেট, অবৈধ স্থাপনা। সরেজমিন দেখা যায়, রূপসা নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকলেও ময়ূর এখন বদ্ধ নদ। এ নদের কুচকুচে কালো পানি কচুরিপানায় ঢাকা, দুই পাড়ে জমেছে আবর্জনার স্তূপ। পানির দুর্গন্ধ থেকে বাঁচতে নাক চেপে পথ চলতে হয়। পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ না থাকা, অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ বিষয়ে অসচেতনতা, জবাবদিহিতার অভাব ও জবরদখল প্রক্রিয়ায় ময়ূর নদ এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

এদিকে খুলনা মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৪ সালে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূর নদ খনন করা হলেও সুফল মেলেনি। একইভাবে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান খনন প্রক্রিয়া নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন পরিবেশবাদীরা। সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ময়ূর নদ ও সংযুক্ত ২২টি খালের প্রায় ১৪ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে।

পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, খুলনার বিল পাবলা এলাকা থেকে রূপসার আলুতলা পর্যন্ত ময়ূর নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। রূপসার আলুতলায় ১০ ভেন্টের একটি গেট  (জলকপাট) নির্মাণ করে নদটিকে বদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে এখানে কোনো জোয়ার-ভাটা হয় না। খুলনা শহরের মধ্যে নদের ছয়টি শাখা ছড়িয়ে রয়েছে। শহরের গৃহস্থ ও বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত পানির ৮০ শতাংশ ২২টি ড্রেনের মাধ্যমে এই নদে পতিত হয়। এ কারণে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আলুতলা ভেন্টের মাধ্যমে নদীর জোয়ার-ভাটা নিয়ন্ত্রিত হলেও বেশির ভাগ সময় জলকপাট বন্ধ থাকে। ফলে পানিপ্রবাহও বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে একটু বৃষ্টি হলেই নগরে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ময়ূরের তলদেশ পলি জমে ভরাট হতে থাকে। প্রবাহ কমে যাওয়ায় শুরু হয় দখলের দৌরাত্ম্য। খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, অবৈধভাবে কেউ নদী দখল ও দূষণ করলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর ময়ূর নদকে বাঁচাতে খনন করা হচ্ছে জানিয়ে সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, একই সঙ্গে নদের দুই পাড় বাঁধাই করে ওয়াকওয়ে, দুই পাড়ের মধ্যে সংযোগ সেতু, বিনোদনের জন্য নৌকা চালানোর ব্যবস্থা, পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুফল মিলবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর