সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ছক কষে মামলা

আসামির এনআইডি দিয়ে ওঠানো হয় মোবাইল সিমকার্ড নেওয়া হয় বাসা ভাড়া

সাখাওয়াত কাওসার

ছক কষে মামলা

‘২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগের এ/পি-২৭/ক নম্বর কাশেম ভিলার তৃতীয় তলা। দীর্ঘ প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে ফরিদপুর সদর থানার শিবরামপুরের উজ্জ্বল সরকার লোটন ডেকে নেন একই এলাকার কলেজছাত্রী পল্লবী সাহাকে (ছদ্মনাম)। সেদিন তাদের বিয়ে করার কথা ছিল। তবে বিয়ে না করে সেই রাতে উজ্জ্বল ও তার তিন বন্ধু মিলে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে ওই তরুণীকে।’ পরদিন যাত্রাবাড়ী থানায় উল্লিখিত বিষয়ে মামলা করেন পল্লবী। পুলিশ গ্রেফতার করে চার আসামিকে। পরে তদন্তের সময় আসামি এবং বাদীর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে পাল্টে যেতে থাকে চিত্র। উঠে আসে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই মূলত ধর্ষণ মামলার ছক কষেন ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের সহকারী কমিশনার মধুসূদন দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় কোন্দলের জের ধরে এমন নাটকীয় ধর্ষণ মামলা সাজানো হয়েছিল। এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন শহিদুল ইসলাম মজনু। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। ডাক্তারি পরীক্ষার  প্রতিবেদন পেলেই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলা হওয়ার পর পুলিশ আসামি লোটনকে গ্রেফতার করে। এরপর অন্য তিন আসামিও জানতে পারেন তাদের নামে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হয়েছে। আসামিরা পুলিশকে বলেন, ধর্ষণ তো দূরের কথা, বাদীকে তারা কখনো দেখেনওনি। আসামি লোটনের উপস্থিতি প্রমাণ করতে প্রতারকরা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আলাদা মোবাইল সিমকার্ড উঠিয়েছিল। তা চালু রাখে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায়। তবে ওই পরিচয়পত্রে উজ্জ্বলের ছবি অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়। বাসা ভাড়া করার সময়ও দেওয়া হয় সেই পরিচয়পত্র। তদন্তে দেখা যায়, ঘটনার দিন ফরিদপুরে অবস্থান করেছিলেন লোটন। এর সপক্ষে ওইদিনের একাধিক ভিডিও ফুটেজও পেয়েছেন তারা। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নাটকীয় এমন ঘটনার তথ্য সামনে আসার পর ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় বর্তমান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মজনুকে। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তাকে হেফাজতে নিলে উজ্জ্বলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের কথা স্বীকার করেন তিনি। ধর্ষণের আড়ালে চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ওই তরুণী। উজ্জ্বল সরকার লোটন এ প্রতিবেদককে বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী মজনু আগেও তার মেজ ভাই উৎপল সরকারের বিরুদ্ধে গোয়ালন্দ থানায় মনগড়া ধর্ষণ মামলা করেছিলেন। ধর্ষণ মামলায় যে চারজনকে আসামি করা হয়েছে এদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান রাব্বী, বেলায়েত হোসেন ও জামাল শেখ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা অস্ত্র মামলার সাক্ষী। তাদের বক্তব্য, অস্ত্র মামলার সাক্ষী যেন না দিতে পারেন এজন্যই মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানো হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তরুণীকে থানায় আনার পর বাদীর বড় ভাই সেজে উত্তম পরিচয়ে একজন থানায় আসেন। এক পর্যায়ে উত্তমের সঙ্গে থানার ভিতরে ওই তরুণীর কথাবার্তায় অসংলগ্নতা বুঝতে পেরে পুলিশের সন্দেহ হয়। এরপর তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, মামলার বাদীকে বোন দাবি করা উত্তমের প্রকৃত নাম সোহেল মাদবর। চেয়ারম্যান শহিদুলের ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে তিনি পরিচিত। সোহেলের বাড়ি ফরিদপুরেই। সাজানো ধর্ষণ মামলার সঙ্গে তারও সংশ্লিষ্টতা থাকায় সোহেলকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর