সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএনপিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি ‘মায়ের কান্না’র

নিজস্ব প্রতিবেদক

যারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে মানুষ পুড়িয়ে মারে, পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তাদের রাজনৈতিকভাবেই বয়কট করতে হবে। গতকাল রাজধানী শিল্পকলা একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ‘মায়ের কান্না’ ও ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠনের যৌথ আয়োজনে এসব কথা বলেন হরতাল-অবরোধ, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আহতরা। আহতরা আরও বলেন, বাসে আগুন, পেট্রল বোমা মারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড হতে পারে না। যারা এসব করছে তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তাদের বিরুদ্ধে দেশে ও বিদেশে জনমত গড়ে তুলতে হবে। এ সন্ত্রাসী কর্মকাে র জন্য রাজনৈতিক দল বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ২৮ অক্টোবর রাজধানী নয়াপল্টনে বিএনপি কর্মীদের হাতে নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের স্ত্রী রুমা আক্তার বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির-জামায়াতের সহিংসতার শিকার আমার স্বামী। তার কী দোষ ছিল? কেন তাকে হত্যা করা হলো? সে তো কোনো রাজনীতি করত না। তাকে কেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হত্যা করা হলো? রুমা আক্তার বলেন, ছয় বছরের তানহা বারবার প্রশ্ন করে, বাবা কবে আসবে? কোনো পুলিশ সদস্য টাকা দিলে সেই টাকা সে জমিয়ে রাখে এবং টাকা জমিয়ে তার বাবাকে সে কিনে আনবে বলে। বড় হয়ে আমার মেয়ে পুলিশ হবে এবং বাবার হত্যার বিচার করবে। নভেম্বর মাসে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসে দেওয়া আগুনে মারা যান ওই বাসের হেলপার আবু নাঈম। তার মা বলেন, আমার ছেলে তো রাজনীতি করত না। কেন তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হলো? তার বাবা সংসারের হাল ধরতে পারেনি, তাই নাঈম বাসের হেলপারি শুরু করে। পুরো পরিবারের খরচ বহন করত সে। তাকে হারানোর পর পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে।

বিএনপি নেতা-কর্মীদের হত্যার শিকার যুবলীগের আজাদের ভাই সাজ্জাদ শেখ বলেন, আমি রাস্তায় গেলে আমাকে হত্যা করবে, তাই আমার পরিবার আমাকে রাস্তায় বের হতে দেয় না। এমন শঙ্কায় আমরা জীবন পার করছি। মনোহরদী উপজেলার ব্যবসায়ী সায়েম বলেন, ২০১৩ সালে রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ করেছিল বিএনপি জামায়াতের লোকজন। এই সময় একজন মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল যেতে চাইলে তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। এতেই আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়ে দেয় তারা। এরপর আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরিন। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাহবাগে বিহঙ্গ বাসে পেট্রোল বোমা মারা হয়। সেই বাস থেকে কোনোভাবে বের হলেও সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেন তিনি। তিনি বলেন, সে দিনের আগুনে আমার দুটি হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। মানবাধিকার দিবসে আমার একটাই দাবি, এসব অগ্নিসন্ত্রাস যারা করছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সালাউদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে ২৩ জানুয়ারি কোনাবাড়িতে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। সেই আগুনে আমি পঙ্গুত্ব বরণ করি। এরপরও বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাস থামেনি।  রাজনীতির নামে যারা এ সন্ত্রাস করছে তদের রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হবে। ২০১৫ সালে দিনাজপুরে বাসে দেওয়া আগুনে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ঠাকুরগাঁওয়ের রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি বাসের ড্রাইভিং করছিলাম। দিনাজপুরে বাসে পেট্রোল বোমা মারার পর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি রাজনীতি করতাম না। কারা এখন বাসে আগুন দিচ্ছে? তারা কী চায়? তাদের সন্ত্রাসের কথা বিদেশে প্রচার করুন। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিদ্রোহ দমনের নামে বিমানবাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় ‘মায়ের কান্না’ সংগঠন। ১৯৭৭ সালে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট সাইদুর রহমান মিঞার ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিন এ সংগঠনের সমন্বয়ক। তিনি বলেন, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ঢাকায় জাপানি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পরিকল্পিতভাবে একটি অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট তৈরি করেন। পরে তথাকথিত বিদ্রোহ দমনের নামে জিয়াউর রহমান একদিনের সামরিক আদালতে বিচার করে সেই রাতেই ফাঁসি সম্পন্ন করতেন নিরপরাধ সামরিক সদস্যদের। রাতের আঁধারে কারফিউ দিয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রংপুর, যশোর ও বগুড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হতো। আমরা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করায় তার গড়া দল বিএনপিকে নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর