দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ নাব্য হারিয়েছে বহুবছর আগেই। ভরাট হয়ে গেছে তলদেশ। ফলে ডুবোচরে আটকা পড়ছে লঞ্চ। আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিদ্যুৎ ও মৎস্য উৎপাদন। এদিকে রাঙামাটিবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্র্রেক্ষিতে হ্রদ ড্রেজিংয়ের উদ্যোগের কথা মুখে শোনা গেলেও থমকে আছে কাগজে কলমে। সিদ্ধান্তহীনতায় ঝুলে আছে হ্রদের ড্রেজিং কার্যক্রম।
রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান জানান, এ বছরও হচ্ছে না কোনো ক্যাপিটাল ড্রেজিং। তিনি বলেন, ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছিল সমন্বিত একটা উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। এ ছাড়া আমার কাছে নতুন কোনো তথ্য নেই। ওপর লেভেলে কাজ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় কাপ্তাই হ্রদ ড্রেজিংয়ের বিষয়ে গবেষণা করছে। তবে কবে ড্রেজিং হবে সে বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে খড়স্রোতা কর্ণফুলী নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে সৃষ্টি করা হয় রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম জলরাশি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের রাঙামাটিতে অবস্থিত এটি। যার আয়তন ৭২৫ বর্গকিলোমিটার। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন, নৌ-যোগাযোগ, জলেভাসা জমিতে কৃষি চাষাবাদ, সেচ, ব্যবহার্য পানি সরবরাহ, পর্যটনসহ বিভিন্ন সুযোগ ও সম্ভাবনা গড়ে ওঠে কাপ্তাই হ্রদ ঘিরে। অথচ গত ৬৩ বছরে কাপ্তাই হ্রদের কোনো সংস্কার, ড্রেজিং বা খনন করা হয়নি। তাই বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি ও বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। হ্রদ এলাকায় গড়ে ওঠা জেলা ও উপজেলা শহরের স মিল, মিলিং মিল, ফিলিং স্টেশন, জেটিঘাট, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল এবং হোটেল, বসতবাড়ি, রেস্তোঁরাসহ আবাসিক এলাকার অসংখ্য বর্জ্য ও ময়লা আবর্জনা পড়ছে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে। তাই কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে ক্রমে সংকট বাড়ছে। এতে নাব্য সংকটে, অস্তিত্বের সংকটে এই হ্রদ। রাঙামাটির পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধূরী জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হ্রদ ঘেঁষে উভয় তীরে অনেকটা বেপরোয়াভাবে গড়ে উঠছে বিভিন্ন বসতবাড়ি। এসব কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে হ্রদটি। কাপ্তাই হ্রদজুড়ে যেসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তবে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি থাকলে নতুন করে কোনো স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ করা যাবে। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদের সীমানা নির্ধারণ করা গেলে অবৈধ স্থাপনা সহজেই উচ্ছেদ করা সম্ভব।