বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
সমর্থন হারাচ্ছে ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ১৫৩, বিপক্ষে ১০ ভোট

প্রতিদিন ডেস্ক

গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ১৫৩, বিপক্ষে ১০ ভোট

গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির পক্ষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৫৩ দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ মাত্র ১০ দেশ। ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে ২৩ দেশ। বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে ভোটের এ ফলাফল পাওয়া যায়। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা

যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে যে ১০ দেশ ভোট দিয়েছে সেগুলো হলো ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, গুয়াতেমালা, লাইবেরিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পাপুয়া নিউগিনি ও প্যারাগুয়ে।

ভোটদানে বিরত ছিল আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, কেপ ভার্দে, ক্যামেরুন, ইকুয়েটরিয়াল গিনি, জর্জিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, লিথুয়ানিয়া, মালাবি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, নেদারল্যান্ডস, পালাউ, পানামা, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, দক্ষিণ সুদান, টোগো, টোঙ্গা, ইউক্রেন, যুক্তরাজ্য, উরুগুয়ে। বাকি ১৫৩ দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে। খবরে বলা হয়, সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া এ প্রস্তাবটি মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়, তার পরও এটি বৈশ্বিক মতামতের সূচক হিসেবে কাজ করে। প্রসঙ্গত, এর আগে অক্টোবরে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পক্ষে ১২১, বিপক্ষে ১৪ ভোট পড়েছিল এবং ৪৪টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। কিন্তু এবারের ভোটে ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য আকারে সমর্থন হারিয়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভোটের এ ফলাফলের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলতে বাধ্য হয়েছেন, গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘নির্বিচার’ বোমা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন হারাচ্ছে, যা স্পষ্ট হয়েছে জাতিসংঘের সর্বশেষ ভোটে। যদিও এ ভোটের আগে বাইডেন বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত ‘বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ’ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ সমর্থন করছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনিই এখন বলছেন, ‘ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে সেই সমর্থন হারাতে বসেছে।’ ওয়াশিংটনে এক নির্বাচনি প্রচার অনুষ্ঠানে তিনি এ বক্তব্য দেন। বাইডেন আরও বলেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত তার কট্টরপন্থি সরকারে পরিবর্তন আনা এবং এটা মানতে হবে যে, ইসরায়েল ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ধারণাকে ‘না বলতে পারে না’। ইসরায়েলের কট্টরপন্থিরাই এ দুই-রাষ্ট্র নীতির ঘোর বিরোধিতা করে থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের এ বক্তব্যে প্রথমবারের মতো এবং সবচেয়ে প্রকট হয়ে দুই মিত্রদেশের নেতাদের চিন্তাধারার পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এদিকে জাতিসংঘে ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সব দেশকে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছে।

নির্বাসিত হামাস নেতা ইজজাত এল-রেশিক টেলিগ্রামে পোস্ট করে জানান, ইসরায়েলের উচিত ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণের উদ্যোগগুলো বন্ধ করা।’

সুড়ঙ্গে পানি ঢালছে ইসরায়েল : ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামাসের ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে পাম্পের মাধ্যমে সমুদ্রের পানি ঢালতে শুরু করেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর মতে, এ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কে হামাসের যোদ্ধারা লুকিয়ে আছে এবং এ নেটওয়ার্ক ঘিরেই হামাসের বেশির ভাগ গেরিলা হামলা পরিচালিত হয়। তবে বাইডেন জানান, তিনি অসমর্থিত সূত্র থেকে জানতে পেরেছেন, সুড়ঙ্গপথে কোনো জিম্মি নেই। তবে যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি পাওয়া কয়েকজন জিম্মি জানিয়েছিলেন তাদের সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বিষয়টি আমলে নেবে বলে জানিয়েছে।

গাজায় কর্নেলসহ ১০ ইসরায়েলি সেনা নিহত : গাজায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এক দিনে অর্থাৎ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) কর্নেলসহ অন্তত ১০ সেনা সদস্যকে হারিয়েছে ইসরায়েল। নিহত কর্নেল গোলান পদাতিক ব্রিগেডের একটি ফরোয়ার্ড ঘাঁটির নেতৃত্বে ছিলেন। খবরে বলা হয়, একটি শরণার্থী শিবিরে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে নিহত হয়েছে নয় সেনা সদস্য। এতে বোঝা যাচ্ছে, একটি গুপ্ত হামলায় ইসরায়েলি সেনারা নিহত হয়েছে। এর আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সোমবার পর্যন্ত গাজায় অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে ১০৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৫-তে।

সর্বশেষ খবর