শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দুধসাদা জলের নহর

আলম শাইন

দুধসাদা জলের নহর

খরস্রোতা পিয়াইন নদের টলমলে জল মাড়িয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছুটছে ওপারের উদ্দেশে। জলতরঙ্গের কুলকুল ধ্বনিতে মুগ্ধ পর্যটক। মুগ্ধ ভুবন চিলের ‘চি..চি..চি..’ সুর ধ্বনিতেও। নৌকা থেকে নামলেই বালুকা প্রান্তর। হেঁটেই পাড়ি দিতে হয় ১০ মিনিটের সামান্য পথ। বালুকা প্রান্তরের দুই পাশে ছোট ছোট টং দোকান আর অদূরে খাসিয়া পল্লীর নয়নাভিরাম সুপারি গাছের সারি; দেখতে বেশ লাগে! কিছু পথ হাঁটলেই সামনে দেখা যায় দুধসাদা জলস্রোতের নহর। খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড়ের গা বেয়ে এই জলস্রোত পিয়াইন নদীতে গিয়ে মিশেছে। জলস্রোতের উৎসস্থল ‘সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত’। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মায়াবি ঝরনা’ নামে পরিচিত। এই জলপ্রপাতের অবস্থান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি ব্রিজ থেকে পশ্চিমে। জলপ্রপাতের গা ঘেঁষে এপারে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার জিরো পয়েন্ট; ওপারে সংগ্রামপুঞ্জি। সংগ্রামপুঞ্জির অবস্থান বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে বিধায় পর্যটক আগে কখনো জলপ্রপাতের শীতল স্রোতের স্পর্শ পায়নি। বর্তমানে বিজিবি আর বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশিরা এ জলপ্রপাতের চূড়াতেও উঠতে পারছে। তবে পাহাড় ডিঙানোর অনুমতি নেই। সংগ্রামপুঞ্জি জলপ্রপাত অন্যান্য জলপ্রপাতের চেয়ে একটু ভিন্ন ধাঁচের। কয়েক ধাপবিশিষ্ট বিশাল বিশাল পাথর সাজানো রয়েছে জলপ্রপাতের গায়ে। যা দেখলে মনে হয় কেউ বুঝি পর্যটকদের জন্য পাথরের সিঁড়ি বানিয়ে রেখেছে; এতটাই শৈল্পিকভাবে সাজানো। আসলে বড় বড় পাথরগুলো ওপর থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নেমেছে; সেগুলো আবার নিচের দিকে চার ভাগ হয়ে ছড়িয়ে গেছে। এখানেই শেষ নয়; চার ভাগ থেকে বিভিন্ন খন্ডে বিভক্ত হয়ে নিচে নেমে সমাপ্তি ঘটিয়েছে। এ পাথরগুলোর গা বেয়েই ওপর থেকে তীব্র বেগে গর্জন করতে করতে জলস্রোত নিচে নেমে আসছে।

লেখক : কথাসাহিত্যিক, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক লেখক

সর্বশেষ খবর