শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রশ্নফাঁসে চেয়ারম্যান চিকিৎসকসহ গ্রেফতার ৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান ও চিকিৎসকসহ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংস্থাটির ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযানে দিনাজপুর, নীলফামারী এবং ঢাকার আশপাশ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন এবং নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু। একই সঙ্গে চিকিৎসকসহ আরও পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ, ডা. সোহানুর রহমান সোহান এবং ডা. তৌফিকুল হাসান রকি। এ ছাড়া পৃথক অভিযানে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ডা. ফয়সাল আলম বাদশা এবং ডা. ইবরার আলমকে। সিআইডি বলছে, গ্রেফতার হওয়া সবাই মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) আজাদ রহমান জানান, ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন ২০১০ সাল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি চক্রটির মাস্টারমাইন্ড জসীমের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।

 সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের অন্য আরেকটি মামলারও আসামি। আবদুল হাফিজ ওরফে হাপ্পু বিটস নামের একটি কোচিং সেন্টারের পরিচালক। এ ছাড়াও তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক। আগে গ্রেফতার হওয়া ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাদের বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। ডা. সোহানুর রহমান সোহান বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজের কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন।

সিআইডি আরও জানায়, ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইল্যান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ডা. ফয়সাল পরবর্তীতে প্রশ্নফাঁস ব্যবসার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন। ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি আগেই গ্রেফতার হওয়া ডা. জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করেছেন। সেই সুবাদে প্রশ্নফাঁসের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। রকি বিটস কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু এবং রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা ডা. ইবরার আলমও ডা. জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন। ইবরার ২০১৩ এবং ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন। রায়হানুল ইসলাম সোহান এবং বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। দুজনই একই স্কুলে পড়ার সুবাদে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁস করা প্রশ্ন পান এবং বকুলকে তা সরবরাহ করেন। বকুল তার চার ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করেন। চারজনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর