শিরোনাম
শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
বেসরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা ব্যবসা

ভর্তির আগেই টেস্টে বিশাল ব্যয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভর্তির আগেই টেস্টে বিশাল ব্যয়

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়েছিলেন সাব্বির আহমেদ। ভর্তির আগেই শুরু হয় দফায় দফায় টেস্ট। তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাই। সেখানে আমাকে ভর্তির আগেই পুরো শরীর এমআরআই থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম টেস্ট করানো হয়। এসব টেস্টের জন্য এনেসথেসিয়া খরচ, বেড ভাড়া, রেজিস্ট্রেশনসহ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। টেস্টের বিল পরিশোধের পর ভর্তি করে শুধু পায়ে ড্রেসিং করে ছেড়ে দেওয়া হয়। চিকিৎসা শুরুর আগেই আমাকে এতগুলো টাকার বিল গুনতে হয়েছে।’ শুধু এই হাসপাতাল নয়, রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিত্র এটি। রোগী পায়ে ব্যথা নিয়ে গেলেও মাথা থেকে শুরু হয় নানা রকমের টেস্টের পসরা। এই টেস্ট করতেই রোগীর খরচের অঙ্ক বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। বেসরকারি হাসপাতালে টেস্ট ফি নির্ধারণ করে না দেওয়ায় ইচ্ছামতো খরচ নিয়ে থাকে হাসপাতালগুলো। জরুরি বিভাগে ভর্তি হলে তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এ সময় রোগী নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার পরিস্থিতি থাকে না। ফলে তাদের ইচ্ছামতো টেস্ট আর তার বিল দিলে তবেই মিলে রেহাই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সারা দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ক্যাটাগরি নির্ধারণ বিষয়ক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবা খাতের একেক রকমের চার্জ ও টেস্ট ফি সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এক মাসের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরি নির্ধারণের মাধ্যমে ফি ঠিক করে দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালের বেড সংখ্যা, যন্ত্রপাতি, অবস্থান, লোকবল, সুযোগ-সুবিধা ভেদে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ, বি, সি, ডি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেওয়া হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির এক রকম সুবিধা, ‘বি’ ক্যাটাগরির এক রকম সুবিধা এবং ‘সি’ ক্যাটাগরি হাসপাতালগুলো মানভেদে এবং সুযোগ-সুবিধা উল্লেখসহ সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট ফি নির্ধারণ করা থাকবে। এতে মানুষ আগে থেকেই জানতে পারবে কোন হাসপাতালে গেলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে এবং কত চিকিৎসা বাবদ ব্যয় হবে।’ কিন্তু এক বছর পার হলেও এ পদ্ধতি আলোর মুখ দেখেনি।

বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে টেস্টের খরচ রোগীদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রামের খরচ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৪ হাজার পর্যন্ত আছে। এখন প্রশ্ন উঠছে খরচের এত পার্থক্য কি শুধু ব্যবস্থাপনার কারণে নাকি রিপোর্টেও তারতম্য আছে।

বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী গেলেও অপ্রয়োজনীয় উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তীতে রোগীর শরীরে অন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। রোগী অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। হাসপাতালের বিলের ফর্দ লম্বা হলেও রোগীর জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়ে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউর দায়িত্ব প্রাপ্ত এক চিকিৎসক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালের আইসিইউতে রোগী আসলে আমরা প্রয়োজনীয় টেস্ট করে ওষুধ শুরু করি। কিন্তু ব্লাড বা ইউরিন কালচার করে দেখা যায় রোগী অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স। পরীক্ষায় যে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় তা যে অ্যান্টিবায়োটিকে নির্মূল হওয়ার কথা তা হয় না। এর কারণ সরকারি হাসপাতালে আসার আগে অধিকাংশ রোগী বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ তে থাকে। সেখানে এত অপ্রয়োজনীয় ও বেশি মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় যে পরবর্তীতে ওসব ওষুধ আর রোগীর শরীরে কাজ করে না। বেসরকারি অনেক হাসপাতাল বিল বেশি করতে রোগী ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশি দামের উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে।’ এসব কারণে হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন অডিট নিয়ে চলছে আলোচনা। কোন রোগে কী ওষুধ, কী টেস্ট দেওয়া হচ্ছে তার যৌক্তিকতা যাচাই করতে। কিন্তু এ অডিট আদৌ শুরু হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর