সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে মরছে তিতাস

মোশাররফ হোসেন বেলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

দখল-দূষণে মরছে তিতাস

কর্তৃপক্ষ বলছেন অভিযান শুরু হবে

বৈচিত্র্যময় বাংলার অন্যতম নদ তিতাস। এই তিতাস নদকে ঘিরে রচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। অথচ সেই তিতাস নদ এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। অবৈধ দখল আর দূষণের ফলে রূপলাবণ্য হারিয়ে নদটি এখন পুরোপুরি অস্তিত্ব সংকটে।

নাব্য হারিয়ে নদের বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় তা এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এতে করে নদকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহীরা তাদের জৌলুস হারিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নদীর নাব্য ফেরাতে খননের কাজ চলছে। দ্রুতই নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, তিতাস নদকে ঘিরে এক সময় সমৃদ্ধ ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিসহ এলাকার অর্থনীতি। এ নদটিতে বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার ও নৌকায় করে এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হতো। লঞ্চের শব্দ আর বড় বড় পাল তোলা নৌকার মাঝি-মাল্লাদের ধ্বনিতে তিতাস পারের মানুষের ঘুম ভাঙত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই তিতাস নদ সরু খালে পরিণত হওয়ায় তা এখন সোনালি অতীত। এরই মধ্যে ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নদটির ১০৩ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ও চর পড়ে ভড়াট হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্যে পৌর এলাকার আনন্দ বাজার, মেড্ডা, শিমরাইল কান্দি, সদর উপজেলার উজানিশারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নদের দুই পাশে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা ও দালানকোঠা। এতে করে নদ সরু হয়ে তার নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। সম্প্রতি নদ খনন কাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ড্রেন ও নালার পানিতে নদের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে এই তিতাস নদকে ঘিরে স্বপ্নবোনা জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে চলছে চরম দুর্দিন। নদের পানি শুকিয়ে মাছশূন্য হয়ে পড়ায় জেলে পরিবারের জীবন কাটছে হতাশায়। এ প্রসঙ্গে জেলে রবি দাস জানান, নদে এখন আর আগের মতো পানিও নেই, মাছও নেই। নদ শুকিয়ে যাওয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। নদী পথে চলাচলকারীরা জানিয়েছেন, নদের পানি কমে যাওয়ায় নৌ চলাচলে সময় বেশি লাগছে। তাছাড়া খনন কাজ শুরু হলেও তা সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। লঞ্চচালক সিরাজ মিয়া জানান, ৪০ বছর ধরে নদীপথে লঞ্চ চালাই। তিতাসের বুকে পানির যে উত্তাল ঢেউ ছিল তা এখন আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে নদের জল শুকিয়ে তা সরু হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। সঠিকভাবে নদের খনন কাজ না করলে এই নদে লঞ্চ, নৌকা ও ভলগেট চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নদের তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, নদের চারপাশ দিয়ে দখলের মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে নদের দুই ধারে বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে তাতে অবৈধভাবে ছোট ছোট স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। নদের ভিতরেই বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা তিতাস নদকে বাঁচাতে সরকারসহ প্রশাসনের জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন যেন অভিযান চালিয়ে নদকে দখলমুক্ত করে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর রহমান জানিয়েছেন, নদের স্বাভাবিক গতি ফেরাতে খনন প্রকল্পের কাজ চলমান। খনন কাজ শেষ হলে নদের পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি নদের নাব্য ফিরে পাবে। জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম বলেন, নদের তীরবর্তী এলাকা দখল মুক্ত করতে অচিরেই অবৈধ স্থাপনা সরাতে অভিযান শুরু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর