বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ব্যালট ছাপানো শুরু

নির্বাচনে ২৭ দলের প্রার্থী ১৫১৬, স্বতন্ত্র ৩৮৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যালট ছাপানো শুরু

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনভিত্তিক ব্যালট পেপার মুদ্রণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের এক সপ্তাহ আগে, অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যালট পেপার মুদ্রণ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ইসি জানিয়েছে, ৪০টির বেশি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বা বাতিল নিয়ে মামলা রয়েছে। আপিল নিষ্পত্তির পরও প্রার্থিতা নিয়ে যেসব আসনের প্রার্থীরা উচ্চ আদালতে যাচ্ছেন, সেগুলো পরে মুদ্রণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে যেসব আসনে কোনো জটিলতা নেই, সেগুলোর মুদ্রণ শুরু করেছে কমিশন।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের পরদিন ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারি হবে ভোট গ্রহণ। এবার ৩০০ আসনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। নতুন করে কিছু প্রার্থী আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাচ্ছেন, তাদের নামও এ তালিকায় যুক্ত হবে।

নির্বাচন ভবনে গতকাল ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পরপরই আমরা ৩০০টি আসন থেকে প্রার্থীদের তালিকা পেয়ে গেছি। সে অনুযায়ী ব্যালট পেপার প্রিন্টিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তিনটি সরকারি প্রেসে ব্যালট মুদ্রণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেসব নির্বাচনি এলাকায় মামলা পেন্ডিং আছে, সেগুলোতে একটু পরে প্রিন্টিং যাবে।

৪০টির বেশি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বা বাতিল নিয়ে মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বরে ব্যালট মুদ্রণ শেষ করতে চাই আমরা। সে আলোকে যেসব নির্বাচনি এলাকায় কোনো মামলা নেই, সেগুলো প্রথমে মুদ্রণ হবে আর যেগুলোতে মামলা রয়ে গেছে, যেমন- হাই কোর্ট থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেতে পারে অথবা কারও প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে, সে ক্ষেত্রে আগে মুদ্রণ করলে পুনরায় মুদ্রণ করতে হতে পারে, আগেরগুলো বাতিল হয়ে যাবে। সে জন্য সেগুলো শেষে মুদ্রণ করা হবে। বিজি প্রেসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যালট মুদ্রণের কাগজ কেনার জন্য তাদের ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এবার ৩০০ আসনে প্রায় প্রায় ১২ কোটি ভোটার রয়েছে। ভোটার সংখ্যা যত, ব্যালট ছাপা হবে তত। ৩০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে গাজীপুর-২ আসনে। সেখানে ভোটার সংখ্যা ৭ লাখ ৭৯ হাজার ৭২৬ জন। সবচেয়ে কম ভোটার ঝালকাঠি-১ আসনে, ২ লাখ ১২ হাজার ১২ জন।

অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, ২৫ ডিসেম্বরের পর জেলা পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ব্যালট পাঠানো হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সেগুলো সংরক্ষিত থাকবে। নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর। ভোটের দিন জেলা থেকে সব উপজেলায় ব্যালট পাঠানো সম্ভব হবে না। কারণ ভোটের আগের দিন কেন্দ্র অনুযায়ী ব্যালট সেট করতে হবে, বাছাই করতে হবে। সেগুলো আগেই পৌঁছাতে হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। নির্বাচনি সামগ্রী মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্ট্যাম্পও আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে।

নির্বাচনে ২৭ দলের প্রার্থী ১৫১৬, স্বতন্ত্র ৩৮৪ : ইসি জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৭টি রাজনৈতিক দলের ১৫১৩ জন এবং স্বতন্ত্র থেকে ৩৮২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি ২৬৫ জন, দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ ২৬৩ জন। সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে দুটি বাদ রেখে এবার ২৯৮ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের মধ্যে বাবুলসহ পাঁচজন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই এবং আপিলে বাদ পড়েছিলেন। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিকদের ছয়টি এবং জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাতে রবিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ শেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২৬৩ জনে। বাদ পড়াদের মধ্যে ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস সালাম হাই কোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আর ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক আর যশোরের বাবুল শামীম প্রার্থিতা ফিরে পেলেন আপিল বিভাগে। এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়াল ২৬৬ জনে। মাঠপর্যায় থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্য একীভূত করে ইসির তৈরি প্রাথমিক তালিকা বলছে, এবার মোট ১ হাজার ৮৯৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫১২ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৩৮২ জন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ২৭টি দলের মধ্যে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ২৯ জন, গণফোরামের ৯ জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৩ জন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের ৬৪ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৫ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৪ জন, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চারজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৩ জন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ১০ জন ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) চারজন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন।

স্বতন্ত্র ফিরেছে দুই : এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা ইসলাম। তিনি আলোচিত অর্থ ও মানব পাচার মামলায় কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী। এ ছাড়া ঋণখেলাপির অভিযোগে বাতিল হওয়া গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। সেই হিসাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮৪।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর