বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে

নজরুল মৃধা, রংপুর

ঐতিহ্যের মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। তবে কেউ কেউ এখনো ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যের এ নিদর্শন। আগে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে মাটির ঘর দেখা গেলেও এখন আর আগের মতো নেই। হাতে গোনা দুই চারজন বাপদাদার এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

ঝড় বৃষ্টির পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমের সময় ঠান্ডা আর শীতকালে গরম অনুভূত হওয়ায় মাটির ঘর জনপ্রিয় ছিল। বর্তমানে সবখানে বিদ্যুৎ সুবিধা থাকায় সেটি ম্লান হয়ে যায়। যার কারণে বলা চলে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির ঘর। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শাল্টি এলাকার মাটির ঘরে বসবাসকারী সামসুজ্জামান, আনারুল ইসলাম, লাল মিয়াসহ অনেকেই মাটির ঘর প্রসঙ্গে বলেন, বাপদাদারা মাটির ঘরে জীবন পার করেছেন। তাদের স্মৃতি ধরে রাখতেই এখনো মাটির ঘরে বাস করেন। তারা জানান, আগে ৬ হাত প্রস্থ ৮ হাত দৈর্ঘ্য একটি ঘর বানাতে খরচ হতো ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে কোনো মিস্ত্রি ছাড়াই পরিবারের সদস্যরা মিলেই এই ঘর তৈরি করতে পারতেন। বর্তমানে ওই ঘর তৈরি করতে লাগে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাই অনেকেই এখন মাটির ঘর তৈরিতে আগ্রহ দেখান না। তারা জানান, এই ঘর তৈরি করতে এঁটেল দো-আশ (লাল) মাটির প্রয়োজন। যে মাটি দিয়ে ঘর তৈরি করা হয় সেই মাটিতে কোদাল দিয়ে ভালো করে কুপিয়ে ঝুর ঝুর করে নেওয়া হয়। তার সঙ্গে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে থকথকে কাদা করে নেওয়া হয়। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে। পরে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেওয়াল তৈরি করা হয়। এরপর সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো মাটির ঘর। ঘরের অন্যান্য অবকাঠামোর চেয়ে দেয়াল তৈরিতে সময় ব্যয় হয় বেশি। দেয়াল ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকাতে হয়। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চালা তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে একটি মাটির ঘর তৈরি করতে ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। কেউ কেউ আবার ঘরটি দ্বিতল করে। নিচে বসবাস, দ্বিতলে ফসল ও অন্যান্য মালামাল রাখে। মাটির ঘর শীত গরম সব সময়ই আরামদায়ক। বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর ১০০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। তবে মাঝে মধ্যে সংস্কারের প্রয়োজন হয়। বদরগঞ্জের শ্যামপুরের শিক্ষক সামসুজ্জামান, মিঠাপুকুরের হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন জানালেন, কখনো কখনো অতিবৃষ্টির ফলে মাটির ঘরের কিছু অংশ ধসে পড়ে। তারপরেও বাপদাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনরায় মেরামত করে বসবাস করতে হয়।

 

সর্বশেষ খবর