৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। একই সঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়া, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ দেশের অর্থনীতির গতি মন্থর করেছে। সে কারণে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। সংস্থাটি মনে করে চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। একই সঙ্গে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে ভারতে ৬ শতাংশ এবং চীনে ৪ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। গতকাল প্রকাশিত সংস্থাটির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের ডিসেম্বর সংস্করণে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, আগামী ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এডিবি এর আগে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ হতে পারে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। যেসব কারণে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না বলে এডিবি মনে করছে, তার একটি হলো বাংলাদেশের পণ্যের গন্তব্য দেশগুলোতে অর্থনীতির গতি কমে যাওয়া। সংস্থাটির মতে, প্রধানত যেসব দেশে বাংলাদেশ পণ্য পাঠায়, সেসব দেশের অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে পড়েছে। সে কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ও উৎপাদন খাতে মাঝারি ধরনের প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অন্য দেশ মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি কমবে বলে মনে করে এডিবি। সংস্থাটি ধারণা করছে চলতি অর্থবছরের বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। অবশ্য কত বাড়বে, তা বলেনি এডিবি। এডিবির হিসাব অনুযায়ী, এ বছর মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে, এমন তালিকায় চারটি দেশ আছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো কাজাখস্তান, মিয়ানমার ও কোরিয়া। সংস্থাটি জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও নেপালে এখনো উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে এডিবি বলেছে, নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির হার প্রায় দুই অঙ্কের ঘরের কাছাকাছি ছিল। আশা করা হচ্ছে, আসন্ন মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতি সহনীয় হতে পারে, যদি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকে। এ ছাড়া বাজারভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রচলনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কম থাকলেও মূল্যস্ফীতি কমতে পারে। এ ছাড়া ভালো ফলনও মূল্যস্ফীতি কমাতে পারে। এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২৪ সালে তা কিছুটা কমে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে এশিয়ার গড় মূল্যস্ফীতিও ২০২৩ সালে কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। তবে ২০২৪ সালে তা বেড়ে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।