বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

হলফনামায় সম্পদের তথ্যে গরমিল

অনেক প্রার্থীর বিরুদ্ধে সম্পদ গোপনের অভিযোগ

শাহেদ আলী ইরশাদ

হলফনামায় সম্পদের তথ্যে গরমিল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের যে তথ্য দিয়েছেন আগের নির্বাচনের সময় দেওয়া তথ্যের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। আবার দু-একজন প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫০০ গুণ। আয়কর আইনজীবীরা বলছেন, সংসদ সদস্য প্রার্থীদের হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদের চেয়ে আরও অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে। অধিকাংশ প্রার্থী সম্পদের প্রকৃত তথ্য গোপন করেছেন। আর যেটুকু উল্লেখ না করলেই হয় না, সেই সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাইলে এসব প্রার্থীর আয়কর নথি পুনঃউন্মোচনা করে আইনের আওতায় আনতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, হলফনামায় দেওয়া সম্পদের তথ্য যাচাই করে দেখা উচিত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বর্তমান সংসদের একজন সদস্য ২০১৮ সালের হলফনামায় ২৪ হাজার টাকা মূল্যের ৫০ শতাংশ ভূমি ও ৩০ লাখ টাকা মূল্যের দোতলা বাড়ি, ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৫০ টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট ও ১৬ লাখ টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাটের তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। তিনি তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও জমা ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ টাকা, উপহারের ৫ ভরি সোনা, ১ লাখ ৭ হাজার টাকা মূল্যের প্রায় ৯ কাঠা ও সাভারে ৫ কাঠা জমির তথ্য দেন। এর মধ্যে বাড়ি, দোকানসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বছরে ৪ লাখ ৩২ হাজার ২২৮ টাকা পেতেন তিনি। ২০২৩ সালের হলফনামায় তিনি বাড়ি, দোকান ও বিভিন্ন উৎস থেকে বছরে ১২ লাখ ৪ হাজার ৭০৩ টাকা ভাড়া পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করেছেন। তবে কয়টি বাড়ি, কয়টি ফ্ল্যাট, কয়টি দোকান ও ভাড়ার অন্যান্য উৎসগুলো তিনি উল্লেখ করেননি। শুধু তাই নয়, গোপন রেখেছেন স্ত্রীর সম্পদের হিসাবও। স্ত্রীর নামে তিনটি ফ্ল্যাট ও তিনটি কারপার্কিং রয়েছে বলে ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনে তথ্য দিয়েছিলেন ওই সংসদ সদস্য। জানতে চাইলে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জ্যেষ্ঠ আয়কর আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা হলফনামায় সঠিক তথ্য দেননি, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। যেসব ফাইল নিয়ে সন্দেহ হবে, সেসব ফাইল তলব করে আয়কর আইনে মামলাও করতে পারবে এনবিআর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় আরেকজন সংসদ সদস্য ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে নগদ ৮৪ হাজার ১০৪ টাকা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৫ লাখ টাকা। মেয়াদি আমানত (এফডিআর) ৫ লাখ টাকা। ৩০ ভরি সোনা। ২ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র আছে বলে উল্লেখ করেন। তবে ২০২৩ সালের নির্বাচনে হলফনামায় তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে না কমেছে, সেটি উল্লেখ করেননি তিনি। শুধু এই দুজন সংসদ সদস্য নন, হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ প্রার্থীর সম্পদের হিসাবে গড়মিল রয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসম্পাদক আবু নাসের মজুমদার মেজবাহ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা সম্পদের যে হিসাব নির্বাচন কমিশনে দিয়েছেন, তার সঙ্গে বিগত সময়ে দেওয়া হিসাবের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ধারাবাহিকতা না থাকলেই সেখানে গড়মিল আছে ধরে নিতে হবে। আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারা আয়কর রিটানের তথ্য গড়মিল করেছেন অথবা কোনো তথ্য গোপন করেছেন, তাদের আয়কর নথি পুনঃউন্মোচন করে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে। এ বিষয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেছেন, যেসব তথ্য হলফনামায় দেওয়া হয়েছে সেটা কি পর্যাপ্ত নাকি এর বাইরেও অঘোষিত সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ রয়েছে। খুবই যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে যে, এটা কি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন কি না? প্রশ্ন তোলেন ইফতেখারুজ্জামান। ড. জামান বলছেন, হলফনামায় দেওয়া এসব সম্পদের বিবরণ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কখনো যাচাই করে দেখেনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর