বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

চলছেই আচরণবিধি লঙ্ঘন

♦ ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে শোকজ ♦ নিখিলকে অনুসন্ধান কমিটির তলব ♦ আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিইসির কাছে রেজাউল করিমের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পর দেশব্যাপী নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। নির্বাচনের প্রচারণার শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকা। নানা বাধা, হুমকি, কর্মীদের মারধর, গাড়ি ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনি প্রচারে প্রার্থীদের জন্য বিধি-নিষেধ থাকলেও তা অনেকেই মানছেন না। যদিও নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের নোটিস দিয়ে দায় সারছে ইসি। এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে পাবনা-১ আসনে নৌকা প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনি আচরণবিধি ভাঙায় ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মাইনুল হোসেন খানকে (নিখিল) তলব করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। 

নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুকে শোকজ : স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করে নৌকা মার্কায় ভোট চাওয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে পাবনা-১ আসনে নৌকা প্রার্থী ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে শোকজ করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির প্রধান (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) ইকরামুল কবির। তিনি জানান, বুধবার সকালে শামসুল হক টুকু বরাবর শোকজ চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার বিরুদ্ধে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী হিসেবে আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এ উল্লেখিত নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুনির্দিষ্ট নিম্নলিখিত অভিযোগ কমিটির কাছে করা হয়েছে। আপনি আপনার বাসভবনে ১৪ ডিসেম্বর বাদ মাগরিব ১) মহিউদ্দিন, প্রধান শিক্ষক, বেড়া সরকারি হাই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সেক্রেটারি, বেড়া উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, ২) মো. আবদুর রাজ্জাক, অধ্যক্ষ, বেড়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ, ৩) হারুনর রশিদ, ভারপ্রাপ্ত সচিব, বেড়া পৌরসভা, ৪) মো. আবুল হাশেম, বেড়া পৌর পুলিশ প্রধানের উদ্যোগে স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের নিয়ে নির্বাচনি মিটিং করেন। মিটিংয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চান এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে তাদের অভিভাবকদের নৌকায় ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করেন। যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী হিসেবে আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ এর ১২ বিধির লঙ্ঘন। অভিযোগ বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য থাকলে তা নিম্ন স্বাক্ষরকারীর কাছে সরাসরি আপনার প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে আগামী ২ (দুই) কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করার জন্য বলা হল। অন্যথায় আপনার ব্যাখ্যা ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

নিখিলকে অনুসন্ধান কমিটির তলব : নির্বাচনি আচরণবিধি ভাঙায় ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খানকে (নিখিল) তলব করেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আইন শাখা বিষয়টি জানিয়েছে। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি ও যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ মো. মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী মঙ্গলবার তাকে এ সংক্রান্ত নোটিস দেন। নোটিসে বলা হয়েছে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আপনি ঢাকা-১৪ (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড নম্বর ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ ও সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে পূর্ব অনুমতি ছাড়া ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর হযরত শাহআলী মাজারের মূল ফটকের ভিতর নির্বাচনি সমাবেশ করেন। পূর্বনির্ধারিত এ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বসার জন্য মাজার চত্বরে মূল ফটকের ভিতরে চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করা হয় ও এতে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেন। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে সভা শেষে আপনি দলীয় প্রতীক নৌকার সমর্থনে স্লোগানমুখর নেতা-কর্মীদের নিয়ে গাবতলী অভিমুখে সড়কে প্রদক্ষিণ করেন। এতে ওই মাজার রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই দিনে কমিটির অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, আপনার পক্ষে রূপনগর আবাসিক এলাকার চৌরাস্তার মোড়ে ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকার হোটেল আরিফ আবাসিকের ভবনে ও সামনে নির্ধারিত মাপের চেয়ে বড় আকৃতির রঙিন ও বহু সংখ্যক ব্যক্তির ছবি সংবলিত ব্যানার টানিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ঘটনা দুটি যথাক্রমে বিষয়োক্ত বিধিমালার বিধি ৬(খ)/৬(গ)/৬ (ঘ)/১১(খ) ও ৭(৩)/৭ (৪)/ ৯(খ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমতাবস্থায়, আপনার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে বিহিত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন বরাবরে অনুসন্ধান রিপোর্ট কেন পাঠানো হবে না, ২৩ ডিসেম্বর ১১টায় নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আপনার ব্যাখ্যা উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

নৌকা প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়ায় জরিমানা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে নৌকা প্রার্থীর পোস্টার ছেঁড়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান ওলি ও তার কয়েকজন সমর্থককে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার পাহাড়পুর আউলিয়া বাজারে আক্কাসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদি হাসান শাওন।  স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আউলিয়া বাজারে ফিরোজুর রহমান ওলির সমর্থক আক্কাস ভূঞার নেতৃত্বে একটি পিকআপ ভ্যান থেকে নৌকার পোস্টার ছেঁড়া হয়। এটি দেখতে পেয়ে সেখানকার স্থানীয় লোকজন প্রশাসনে খবর দিলে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থল গিয়ে আক্কাস ভূঞাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিইসির কাছে রেজাউল করিমের চিঠি

পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ক্যাডার দিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর অফিস ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়া, সমর্থক ও কর্মীদের বাসায় গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করা এবং শহরে সশস্ত্র মহড়ার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে দেওয়া এক লিখিত অভিযোগে আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

প্রচারণায় সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগে শোকজ

সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কুষ্টিয়া-৩ আসনের দুই প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিস দিয়েছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল দুপুরে এ আসনের নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান কুষ্টিয়া যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মুহাম্মাদ মাজহারুল ইসলাম এ শোকজ করেন। কুষ্টিয়া-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনুকে শোকজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার গাড়ি ব্যবহার এবং কর্মচারীদের নির্বাচনি কাজ করতে বাধ্য করেছেন। একইভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফের সমর্থক সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিলন মন্ডল ও ছাত্রলীগ নেতা শামীমকে আলাদাভাবে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী পারভেজ আনোয়ার তনুর ঈগল প্রতীকের নির্বাচনি প্রচারণায় নিয়োজিত কর্মীদের বাধা দেওয়া ও মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। আজ ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় তনুকে এবং দুপুর ১২টায় মিলন ও শামীমকে আদালতে হাজির হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উসকানিমূলক বক্তব্যসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কুমারখালী পৌর মেয়র সামসুজ্জামান অরুণ এবং প্যানেল মেয়র হারুন অর রশীদ হারুনকেও পৃথকভাবে শোকজ নোটিস দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জের এ দুই সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত ১২ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় নন্দলালপুর ইউনিয়নে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রউফের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুমকি দেন তারা।

টাঙ্গাইলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তিন প্রার্থীসহ চারজনকে শোকজ

সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টু এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরীফ মাহমুদকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। গত ১৯ ডিসেম্বর কমিটির চেয়ারম্যান টাঙ্গাইল সিনিয়র সহকারী জজ মল্লিকা বসাক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ নোটিস দেওয়া হয়। নোটিসে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনি সভায় ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে গজারি গাছের ডাল আর বাঁশের লাঠি তৈরি করতে বলেছেন ভোটারদের। এতে করে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা ২০০৮ এর ১১ (ক) বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। এ কারণে তাদের দুজনকেই আগামী ২৪ ডিসেম্বর  বেলা ১১টার মধ্যে হাজির হয়ে লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে নৌকার মনোনীত প্রার্থী তানভীর হাসান ছোট মনিরকে আজ ২১ ডিসেম্বর দুপুর আড়াইটায় এবং ঝাওয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিসে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধুর ছবি, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও কেন্দ্র খরচের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বেলা ১১টায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডুকে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল-২ এর নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান নিভানা খায়ের জেসী স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ নোটিস দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর