শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

থামছে না আচরণবিধি লঙ্ঘন

প্রতিদিন ডেস্ক

থামছে না আচরণবিধি লঙ্ঘন

নির্বাচনি প্রচারের সময় বিভিন্ন স্থানে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অনুসন্ধান কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে নৌকার প্রার্থী হুইপ ইকবালুর রহিম এবং ঠাকুরগাঁওয়ে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে শোকজ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট প্রার্থী ও কুমিল্লায় কয়েক সমর্থককে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

দিনাজপুর : নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী হুইপ ইকবালুর রহিমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে ২৩ ডিসেম্বর বিকাল ৪টার মধ্যে অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের দফতরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে বুধবার তাঁর নির্বাচনি এলাকার নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সাদেকীন হাবীব বাপ্পী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া হয়। নোটিসে বলা হয়, ইকবালুর রহিম ১৯ ডিসেম্বর অপরাহ্ণে দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে নির্বাচনি সভা করেন। সেখানে দলীয় সমর্থকরা প্রার্থীর ছবি ও দলীয় প্রতীক সংবলিত টি-শার্ট পরে শোভাযাত্রা করেন, যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ১০(ঙ)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঝোলানো পোস্টারে দলীয় প্রধানের সঙ্গে প্রার্থীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি কোনো অনুষ্ঠানে তোলা মর্মে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ বিষয়টি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৭(৫)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ঠাকুরগাঁও : নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেনকে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ) দিয়েছেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ লুৎফর রহমান। গতকাল এ নোটিস প্রেরণ করা হয়। ২৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তাঁকে সশরীরে উপস্থিত থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিসে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ থেকে মনোনীত এই প্রার্থী নির্বাচনি প্রচারে ২০ ডিসেম্বর নারগুন ইউনিয়নের পোকাতি সেন্টার হাটে জনসভায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন, যা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। রমেশ সেনের এ বক্তব্য প্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ৭৩(৩)(খ) ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ১১(ক) লঙ্ঘন করেছে। উল্লেখ্য, রমেশ চন্দ্র সেন নির্বাচনি জনসভায় বিএনপির সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘বিএনপির যেসব ফ্লোটিং ভোটার, তারা যেন ভোট দিতে যান, যদি ভোট দিতে না যান আর যদি তারা সুবিধাভোগী হন, তাহলে তালিকা থেকে তাদের নাম কাটা যাবে, আমরা কিন্তু এক কথার লোক। আমি দিয়েছি আমি কাটব। আর যদি আপনারা যান, সেখানে সব সেন্টারে কমিটির ছেলেপেলে থাকবে, তারা কিন্তু মার্ক করবে। প্রত্যেকটা মার্ক করবে, যদি না যান তাহলে কিন্তু সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কুমিল্লা : নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় কুমিল্লার মেঘনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর দুই সমর্থককে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল মেঘনা উপজেলার ভাওরখোলা কদমতলী এলাকায় এ জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার দুজনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। জানা গেছে, নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আবুল কালাম ও মোহাম্মদ কবির হোসেনকে আলোকসজ্জা করা, তোরণ নির্মাণ এবং লাউড স্পিকারে মিউজিক বাজানোর জন্য এ জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া নির্ধারিত সাইজের চেয়ে বড় ছবিযুক্ত ব্যানার ও রঙিন ব্যানার লাগিয়েছেন তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নাসিরনগর উপজেলায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট প্রার্থীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার বিকালে উপজেলা পরিষদের সামনে তাকে এ জরিমানা করা হয়। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোনাব্বর হোসেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোনাব্বর হোসেন বলেন, উপজেলা সদর থেকে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্ট প্রার্থী মো. ইসলাম উদ্দিন দুলাল (মোমবাতি প্রতীক) মোটরসাইকেল দিয়ে শোভাযাত্রাসহ মিছিল করায় প্রার্থীর পক্ষে আবদুল বাছিরকে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮-এর (ক) ধারা লঙ্ঘনে ১৮(১) ধারায় ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড আরোপ করে আদায় করা হয়।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোস্টার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে পৌর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বুধবার রাত ১০টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোশারফ হোসাইন এ জরিমানা করেন। ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম শেখ মঞ্জুর ই মাওলা ফারহান।

ফরিদপুর : ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ এনেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হক অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুুল কাদের আজাদ মিথ্যা প্রচারে নেমেছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি আমার ও আমার সমর্থকদের বিরুদ্ধে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে নির্বাচনি পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে তার কর্মী-সমর্থকরা নানা উসকানিমূলক কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আমার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে তার নিয়ন্ত্রণাধীন মিডিয়া। অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর