শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষ ভোটে ইসির চোখ

গোলাম রাব্বানী

নিরপেক্ষ ভোটে ইসির চোখ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণের দিকে দৃষ্টি রাখছে নির্বাচন কমিশন। বিশেষ করে ১০৮টি আসনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। নির্বাচনি মাঠের সব ধরনের অভিযোগ আমলে নিচ্ছে কমিশন। এর মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দিতে শুরু করেছে জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্র এবং খোদ ক্ষমতামসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দিতে চায় ইসি। 

প্রতীক পেয়েই প্রচার শুরু করেছেন প্রার্থীরা। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না এলেও নির্বাচন বেশ জমজমাট হওয়ার আভাস মিলেছে। কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্র, কোথাও জাতীয় পার্টি, কোথাও অন্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে তুমুল লড়াই হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১২৬টিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে এসব আসনের কোনোটিতে দুই বা ততধিক প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা আছে। তবে বাকি ১৭৪ আসনে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ৫৮ ভাগ আসনের প্রার্থী আগেভাগেই জয়ের বন্দরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বলে তারা মনে করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ভোটের মাঠে এসব প্রার্থীর জয় এখন শুধু সময় ও আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। এ নির্বাচনে ভোটে নেই দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করেছে। এ আসনগুলোয় নৌকার কোনো প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টির আরও ২ শতাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকলেও তারাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে পারছেন না প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে বেশকিছু আসনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটের লড়াই জমিয়ে তুলেছেন আওয়ামী লীগেরই মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ট্রাক, ঈগল ও কাঁচি মার্কার আক্রমণের মুখে পড়েছেন নৌকার ১২৬ আসনের মাঝি।

সংসদ নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে জিরো টলারেন্স নীতিতে অনড়। এ ছাড়া নির্বাচনে দল মত নির্বিশেষে সব সম্মানিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের পরিবেশ সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে দেশ্যব্যাপী নির্বাচনি সফর করছেন সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনাররা। নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন দায়িত্বে নিয়োজিত সবাইকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। নিরপেক্ষ ভোটে গুরুত্বপূর্ণ আসনে ইসির বিশেষ নজর থাকবে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন, ৩০০ আসনেই নির্বাচন কমিশনের সমান নজর থাকবে। তবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ আসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। যেখান থেকেই অভিযোগ আসবে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক সত্যতা যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চাপ আছে কি না প্রশ্নে তিনি বলেন,  আইন ও বিধি মোতাবেক নির্বাচন কমিশনের পরামর্শ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় আন্তরিকতার সঙ্গে শতভাগ পালন করছে। ভোটকে সামনে রেখে সবার আস্থা অর্জনের জন্য প্রতীকী হিসেবে পুলিশ কমিশনার, ডিসি-এসপি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ওসি রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যে কোনো কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করলেই প্রমাণ-সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জাপা, স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ধনী-গরিব, এমপি-মন্ত্রী-কর্মী, সৈনিক-জেনারেল, শিল্পপতি-ওয়ার্কার যেই হোক না কেন সবাই আমাদের দৃষ্টিতে সমান। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসাররা কোনো প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ না করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারও অভিযোগ থাকলে অবশ্যই ইসি তা শুনবে এবং তা যাচাইবাছাই করে ব্যবস্থা নেবে। তবে তদন্তে অভিযোগ মিথ্যা বা হয়রানিমূলক হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইসিতে আসছে অভিযোগ : চাঁদপুর-৪ আসনের নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. শামছুল হক ভূঁইয়া। চাঁদপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন এই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী।

লিখিত অভিযোগে শামছুল হক ভূঁইয়া বলেছেন, গত ১৮ ডিসেম্বর নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সফিকুর রহমান চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের নিকট থেকে প্রতীক নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমর্থকদের নিয়ে গণসমাবেশ করেন। সমাবেশে সফিকুর রহমান ও তার অনুসারীরা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লা তপাদারকে হত্যার হুমকি দিয়ে একপর্যায়ে সফিকুর রহমানের অনুসারী সন্ত্রাসী হেলালের নেতৃত্বে শহীদুল্লা তপাদারের দিকে ককটেল নিক্ষেপ করা হয় এবং তাকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত ও মারধর করে। শহীদুল্লা তপাদার এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. শামছুল হক ভূঁইয়ার ঈগল প্রতীকের একজন সমর্থক। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ১৯ ডিসেম্বর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মো. শামছুল হক। এদিকে নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী উপজেলা নিয়ে গঠিত পিরোজপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) অভিযোগ করেছেন একই আসনের নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম। রংপুর-২ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী আনিসুল ইসলাম মন্ডল বদরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও এমপি আহসানুল হক চৌধুরীকে পুলিশ প্রটোকল প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ভোটার ও সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ লিখিতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে দিয়েছেন জাপা প্রার্থী। বৃহস্পতিবার তিনি জানান, তিন দিন আগে এ বিষয়ে তিনি সিইসি বরাবর অভিযোগ করেও প্রতিকার পাননি।

প্রতিদিনের আচরণবিধি প্রতিপালনের প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ ইসির : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণ প্রতিপালনের বিষয়ে প্রতিদিনের প্রতিবেদন দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির উপসচিব মো. খোরশেদ আলম নির্দেশনাটি রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বেলা ১১টার মধ্যে আগের দিনের প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ছকে আচরণবিধি প্রতিপালন পর্যবেক্ষণে সময়, কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, অভিযোগপ্রাপ্তির উৎস সম্পর্কে জানাতে হবে। আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মাঠে ৮ শতাধিক নির্বাহী হাকিম দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া রয়েছে ৩০০ নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

সর্বশেষ খবর