শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
দিনাজপুরে দখল-দূষণে অধিকাংশ নদী

যমুনা ও ইছামতী এখন খেলার মাঠ

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

যমুনা ও ইছামতী এখন খেলার মাঠ

একসময়ের খরস্রোতা ছোট যমুনা, ইছামতী, ঢেপা, পুনর্ভবাসহ কয়েকটি নদী এখন প্রায় পানিশূন্য ধু-ধু বালুচরই নয়, পরিণত হয়েছে খেলার মাঠ কিংবা চাষাবাদের জমিতে। নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর একমাত্র খেলার মাঠ হয়েছে নদী। দিনাজপুর জেলার ওপর দিয়ে ছোট-বড় মিলে ২১টি নদী প্রবাহিত হয়। নদীগুলো হলো- ছোট-বড় আত্রাই, করতোয়া, কাঁকড়া, ঢেপা, পুনর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা, ইছামতী, ভুল্লী, পাথরঘাটা, নর্ত, ছোট ঢেপা, বেলান, নলসীশা, তুলসীগঙ্গা, চিরি, মহিলা, তেঁতুলিয়া (তুলাই), ভেলামতী। এসব নদীর মোট দৈর্ঘ্য ৭২৪ কিলোমিটার। ১৩ উপজেলায় ছোট-বড় বিল রয়েছে ৭৫টি।

শুষ্ক মৌসুমে ছোট-বড় নদীর চরে এখন সহস্রাধিক চাষি প্রায় ৯০৬ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮, ব্রি-৩২ জাতের বোরো ধান, তরমুজ, আলু, মরিচ,  সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। ভূমিহীন কৃষকরা সুযোগ পেলেই এসব নদীর চরে চাষাবাদ করেন। একসময় এসব নদী দিয়ে চলত বড় বড় পাল তোলা নৌকা। আজ আর নেই সেই অবস্থা। বরং নদী হারাতে বসেছে গতিপথ ও অস্তিত্ব। অনেক স্থানে নদী টিকে আছে নামেই। হারিয়েছে নাব্য। এতে এ অঞ্চলের পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ছে। আবার দখল আর ভরাটে নদীগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বর্ষাকালে দেখা দেয় বন্যার আশঙ্কা। বর্ষায় পানি থাকলেও নভেম্বরের-মার্চ পর্যন্ত নদীর বুক হয়ে ওঠে বিস্তীর্ণ মাঠ। ছোট যমুনা, পুনর্ভবাসহ কয়েকটি নদীতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ ফেলায় নদী শিকার হয়েছে দূষণের। নদীর দুই তীর দখল করেছে দখলবাজরা। নদীর তীরে বসবাস করা যুবক অপুসহ কয়েকজন জানান, শুষ্ক মৌসুমে শিশু-কিশোররা খেলার মাঠ না পেয়ে নদীতে খেলা করে। মাঝে-মধ্যে গ্রামের তরুণরা ক্রিকেট, ফুটবলের টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করে নদীর চরে। দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, জেলায় ছোট-বড় মিলে ২১টি নদী রয়েছে। পুনর্ভবা, তুলাইসহ কয়েকটি নদীর প্রস্থ ও গভীরতা কমে প্রায় সমতল হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পলি ও বালু পড়ে নদী ভরাট হয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। জেগে ওঠা চরে চলে চাষাবাদ। আবার বর্ষা মৌসুমে দেখা দেয় বন্যার আশঙ্কা। এজন্য পুনর্ভবা নদীর পার ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে পুনর্ভবাসহ ৬টি নদীতে খনন করা হয়েছে। আগামীতে ছোট যমুনা ও ইছামতী নদী খনন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। নদী দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদী শাসন করার কাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু নদীর ভূমির দায়িত্ব ভূমি অফিসের। জেলা প্রশাসন আত্রাই, পুনর্ভবাসহ কয়েকটি নদীর দখলকারীর সংখ্যা নিরূপণ করে যাচাই করছে। প্রায় দেড় হাজারের অধিক দখলকারী রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষি মৌসুমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে পুনর্ভবা নদীর গৌরীপুর এলাকায় একটি রেগুলেটর কাম ব্যারাজ নির্মাণ করা হয়েছে। এটি বিরল ও দিনাজপুর সদর উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজারের অধিক জমি চাষের আওতায় এসেছে। এ ছাড়াও সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগব্যবস্থা ও আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থারও উন্নয়ন হয়েছে।

সর্বশেষ খবর