উদ্বোধনের তিন বছর পার হলেও নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা ৫০ শষ্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা শুরু হয়নি। ফলে সরকারি একটি আধুনিক হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার, নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবলের অভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত উপজেলার প্রায় ৩ লাখ মানুষ। আর এই ৩ লাখ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে মাত্র দুজন চিকিৎসক। অর্থের অভাবে হতদরিদ্র্য পরিবার জেলা বা বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিনা চিকিৎসায় অনেক রোগী মারা যাচ্ছেন।
জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিনেও পুরোপুরি না হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা চালু হচ্ছিল না। এলাকাবাসীর দাবির মুখে ২০২১ সালের ২৭ জুলাই হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের এক বছর চার মাস পার হলেও ডাক্তার, নার্স ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল এখনো নিয়োগ হয়নি। ফলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত প্রায় ৩ লাখ মানুষ। তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ নাটোর সদর হাসপাতালের দুজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে শুধু বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। জরুরি বিভাগ ও রোগীদের ওয়ার্ড চালু করা সম্ভব হয়নি। সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখা ও করোনার টিকা প্রদান ছাড়া অন্য সেবা প্রদান করা হয়
না। হাসপাতালটির ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর আবাসিক সুবিধার জন্য তিনটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দরিদ্র ভ্যানচালক আমিন শেখ প্রেশার ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। বহির্বিভাগে দুজন ডাক্তারের মধ্যে একজনকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। আমরা জানি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে ওষুধ দেয়। কিন্তু এখানে শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে দিল। চার মাস আগে আমার স্ত্রী রেজিয়া বিবিকে অর্থের অভাবে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে চিকিৎসার অভাবে হৃদরোগে মারা গেছে। হাসপাতাল চালু থাকলে স্ত্রীকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারতাম বলেই কেঁদে ফেলেন। চিকিৎসা নিতে আসা রোজিনা বেগম বলেন, আমার হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথায় চলাফেরা করতে পারছি না। এ হাসপাতালে নাকি বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়। তাই এসে একজন ডাক্তার দেখে শুধু কাগজে ওষুধের নাম লিখে দিল, কিন্তু ওষুধ দিল না। আমার স্বামী নেই ওষুধ কে কিনে দেবে? নাটোর সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, জনবল নিয়োগের নথিপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই জনবল নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। আশা করছি, শিগগিরই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁইয়া বলেন, আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আশা করছি শিগগিরই জনবল নিয়োগ দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা চালু হবে। ২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালে হাসপাতালটি নির্মাণকাজ শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগ। শেষ হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। আর ২৫ মে হাসপাতালটি নাটোর স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিএমই জেভি।
-(1.jpg?v=1721462047)
