সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

অ্যাকশনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন

ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে শোকজ ও মামলা হচ্ছে -ইসি মো. আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, আচরণবিধি লঙ্ঘনও বাড়ছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি মাঠে উত্তেজনাও দিন দিন বাড়ছে। হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন আসনে। এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে কমিশন। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী (বর্তমান এমপি) বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারা হলেন- চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও ঝিনাইদহ-১ আসনের আবদুল হাই। এ ছাড়া চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রচারে বাধা দেওয়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের নামে মামলা হয়েছে। নির্বাচনি এলাকায় সহিংসতার সঙ্গে প্রার্থীদের শোকজ ও মামলা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে নরসিংদী, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী এলাকায় এমন তথ্য রয়েছে। শোকজ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার করছেন, নির্বাহী বিচারিক হাকিমের কমিটি করছে। ইসির পক্ষ থেকে সরাসরি শোকজ করছি না দু-একটা ছাড়া। মাঠে শোকজ করার পর জবাব দিচ্ছে, এসব প্রতিবেদন আসছে ইসিতে। কোনো ক্ষেত্রে আর্থিক জরিমানা করা হচ্ছে একাধিকবার, গ্রেফতার করা হয়েছে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে আদালতেও পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচনি জনসভায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের নাম মুছে ফেলার হুমকি দেওয়ায় অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তলব করেছে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি। নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিনের নাম মুছে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই আসনের সংসদ সদস্য বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ও অনুসন্ধান কমিটির প্রধান মোহাম্মদ রেজাউল হক স্বাক্ষরিত নোটিসে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রচার ঘিরে ছোটখাটো ঘটনা ঘটতে পারে : নির্বাচন কমিশনার আলমগীর : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সহিংসতার মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, প্রচারকে ঘিরে ‘ছোটখাটো’ কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। তার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সব নির্বাচনে ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে।’ বিএনপির বর্জনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত ও সহিংসতার মধ্যে গতকাল ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করলেন তিনি।

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে। ভোটে প্রচারে নামার পর থেকে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া, মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। মাদারীপুরে ভোটের প্রচারে বের হয়ে হামলার শিকারের পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় ইসি প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে আগের দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান। কিছু তথ্য পাওয়ার পর রবিবারই কঠোর সিদ্ধান্ত হতে পারে বলেও জানান তিনি। তবে আলমগীর বলেন, বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জড়িতদের ব্যাপারে প্রতিবেদন আসার পর বিচার বিশ্লেষণ করা দেখা হবে। প্রতিবেদনে কী এলো তা দেখে সিদ্ধান্ত হবে।

প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে আনিছুরের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, যিনি বলেছেন তাকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে। আমি তো এমন কথা বলতে পারি না। রিপোর্টই তো হাতে আসেনি। রিপোর্ট পেলে আমরা বসব, আলোচনা করব, দেখব। তারপর রিপোর্ট আসার পরই তো একজন প্রার্থীর কথাও শুনতে হবে আইন অনুযায়ী; তাকেও আমাদের ডাকতে হবে, ‘আপনার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আছে আপনার বক্তব্য কী?’ তারপর যাচাইবাছাই করতে হবে।

নিয়মের মধ্যে থেকে ইসি ‘সবই করছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন সরাসরি একজনকে ডেকেছে (আমির হোসেন আমু) এবং তিনি এসে জবাব দিয়েছেন। যেভাবে সোশাল মিডিয়ায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রকাশ হয়েছে, বাস্তবে তা হয়নি; এডিটিং করে প্রকাশ করা হয়। তবুও পরে আচরণবিধি মানার বিষয়ে সাবধান হবে বলে জানিয়ে গেছেন এ প্রার্থী।

কুমিল্লা-৬ আসেন নৌকার প্রার্থী সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্ত করে কুমিল্লার ডিসি ও পুলিশ সুপার কী জানিয়েছেন- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিবেদন এলে দেখা যাবে। অনুসন্ধান কমিটি তাকে তিনবার শোকজ দিয়েছে। কী ঘটেছিল সেসব প্রতিবেদনে উঠে আসবে।

অন্য এক প্রশ্নে বিএনপির ভোট বর্জনের প্রতি ইঙ্গিত করে আলমগীর বলেন, যদি সবাই আসত (ভোটে), আরও ভালো হতো। প্রার্থী বেশি থাকলে স্বাভাবিকভাবে পরিবেশ ব্যালেন্সড থাকে। একতরফাও বলা যাবে না। অনেকগুলো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে। তারা (বিএনপি) এলে আরও ভালো হতো, নির্বাচনটা ব্যালেন্সড হতো। সেখানে অনেক বিষয়ে আমরা খুব সহজেই পজিটিভি রেজাল্ট পেতাম।

নির্বাচনে বর্জনটা ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) শুধু নির্বাচনেই আসেনি; বাধা দেওয়ার কার্যক্রম করে যাচ্ছে ঘোষণা দিয়ে। বর্জনের আহ্বান জানাচ্ছে সেটা নিয়ে আমাদের বক্তব্য নেই। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আহ্বান যে কেউ জানাতে পারে। কিন্তু যেগুলো নির্বাচনি আইনে অপরাধ হিসেবে বলা রয়েছে, কাউকে বাধা দেওয়া, ভোটারকে বাধা দেওয়া অথবা ভোট কেন্দ্র করতে বাধা দেওয়া; ভোটের পক্ষের কর্মসূচি বাধা দেওয়া, হুমকি দেওয়া, ভয় দেখানো এসব তো নির্বাচনি আইন অনুযায়ী অপরাধ। বিভিন্ন জায়গায় বাসে আগুন, ট্রেন লাইনের ক্ষতি করার কারণে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সেদিকে সময় দিতে হচ্ছে মন্তব্য করে আলমগীর বলেন, দলটি ভোটে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসবে ব্যস্ত থাকতে হতো না।

শাম্মীর বিরুদ্ধে হামলা-নির্বাচনি ক্যাম্প বন্ধের অভিযোগ পংকজের অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার, হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত অবৈধ প্রার্থী ড. শাম্মী আহমেদের পক্ষের সমর্থকরা নির্বাচনি ক্যাম্প বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী পংকজ নাথ। গতকাল দুপুরে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশন বরাবর তিনি এ অভিযোগ জানান। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ড. শাম্মী আহমেদ দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে প্রার্থিতা হারিয়েছেন। সবকিছু শেষে তার প্রার্থিতা এখনো হাই কোর্টের রিভিউয়ে আছে। কিন্তু তারপরও তার সমর্থকরা মিছিল করছে এবং আমার সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর