সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতাল

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতাল

চিকিৎসক, জনবল সংকট, রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ও অ্যাম্বুলেন্স স্বল্পতাসহ নানা সমস্যায় খুঁড়িয়ে চলছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। আবাসিক মেডিকেল অফিসার কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, সিনিয়র গাইনি কনসালট্যান্টসহ চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ১৯২ জনবলের স্থলে রয়েছেন মাত্র ১২২ জন। এ ছাড়া ১০০ শয্যার জন্য নির্ধারিত সরঞ্জাম, জনবল ও ভবনেই চলছে ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম। নতুন ভবন নির্মাণ শেষ হলেও হস্তান্তর না হওয়ায় নানা সংকট স্থায়ী হয়ে গেছে। এ ছাড়া ডাক্তারের অনুপস্থিতি সংকটকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর প্রায় ২৪ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে শয্যা স্বল্পতায় মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। রোগীদের অভিযোগ, রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে। অনেকের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া সুইপার সংকটের কারণে যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। এ অবস্থায় সুচিকিৎসা ও সেবার মান নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই ভুক্তভোগীদের।

হাসপাতালটিতে ঠান্ডাজনিত চিকিৎসা নিতে আসা লালমনিরহাট শহরের বাহাদুর মোড়ের বাসিন্দা সাবিনা বেগম বলেন, সকাল ১০টায় এসেছি দুপুর ১২টা পার হলেও ডাক্তার আসেনি। ডাক্তারের কক্ষে নার্সরা আছেন। জেলার আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ির পূর্ণচন্দ্র বলেন, ‘সকাল ৯টায় অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, দুপুর হয়ে গেলেও ডাক্তারের দেখা পাইনি। কর্তৃপক্ষ জানাল তিনি ছুটিতে আছেন। অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না।’ সরকারি হাসপাতালে যদি চিকিৎসা না পাওয়া যায় তাহলে হাসপাতালে ডাক্তার (চিকিৎসক) থেকে লাভ কী। পাশে থাকা আরেক রোগীর আত্মীয় মো. লাজু মিয়া জানান, সম্প্রতি সদর হাসপাতালে তার নিকটাত্মীয় অস্ত্রোপচার করানোর জন্য ভর্তি হয়। ২-৩ দিন থাকার পর চিকিৎসক জানান এখানে অস্ত্রোপচার করাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাই রংপুর নিতে হবে রোগীকে। পরে বাড়িতেই নরমাল ডেলিভারি হয় তার আত্মীয়ের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, হাসপাতালে কর্মরত বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এ ছাড়া অনেক চিকিৎসক রংপুরে বসবাস করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সেবা দেন। ফলে তারা নানা অজুহাতে হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকেন। এতে রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা পান না।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. রমজান আলী বলেন, ১০০ শয্যা হাসপাতালেরই জনবল সংকট ছিল। সেই জনবল দিয়েই ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভালো সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। জনবলের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর হাসপাতালের নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলে রোগীদের শয্যা সংকট থাকবে না।

সর্বশেষ খবর