সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভারত ও পাকিস্তানিদের নিয়ে বাংলাদেশিদের হানিট্র্যাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত ও পাকিস্তানিদের নিয়ে বাংলাদেশিরা মিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে তুলেছেন ভার্চুয়াল দুনিয়ার ফাঁদ হানিট্র্যাপ। অনলাইনে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে কথা বলার নামে ভিডিওকলে আসে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও নিয়ে সেগুলো এডিট করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। চক্রের সদস্যরা সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন। চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন।

গত বুধবার রাজধানীর বনানীর কড়াইল এলাকা থেকে এ চক্রের বাংলাদেশি দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- মো. টিপু সুলতান ও মো. মোসলেম রানা। গতকাল এসব তথ্য জানান ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, ফেসবুকে ভারতীয় শিক্ষার্থী পরিচয়ে বাংলাদেশি এক তরুণের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের। একপর্যায়ে উভয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলার সময়ে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর সেগুলোকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে। এরপর ভুক্তভোগী বাংলাদেশি তরুণের কাছে ১ লাখ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী তরুণ মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার এডিট করা নগ্ন ছবি ও ভিডিও ডিলেট করে দেবে বলে বিভিন্ন বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে প্রতারকের বিকাশ নম্বরে ৭ হাজার টাকা পাঠায়। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনেই কলেজ শিক্ষার্থী। টিপু রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ও মোসলেম রানা তিতুমীর কলেজে স্নাতক কলেজের শিক্ষার্থী।

তারা পড়াশোনার জন্য বনানীর কড়াইল এলাকায় থাকত। এই চক্রটি চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতত। এরপর এডিট করা ছবি বা ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। এই চক্রে ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকরা জড়িত রয়েছে। এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড ভারতীয় শাকিল। সে বিভিন্ন লোন অ্যাপস থেকে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের যোগাযোগের নম্বর ও ফেসবুক লিংক সংগ্রহ করত। এরপর সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করে টাকা হাতিয়ে নিত। আর এ জন্য তারা ভুয়া ইউপিআই (টাকা লেনদেনের অ্যাপ) ব্যবহার করত। যার লিংক পাঠানো হতো বাংলাদেশি এজেন্ট টিপুকে। টিপু ইউপিআই পাঠায় পাকিস্তানি এজেন্ট পারভেজকে। পারভেজ ভুক্তভোগীদের কল দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করত। আর সেই টাকা পাঠানো হতো শাকিলকে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার ২৫ শতাংশ করে পেতেন এজেন্টরা। গ্রেফতার দুই শিক্ষার্থী একই এলাকায় বসবাস করার সূত্রে পরিচিত। তারা দ্রুত সময়ে বেশি উপার্জনের আশায় প্রতারণায় জড়িয়ে যায়। এরপর ভারতীয় নাগরিকদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে এ চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বিকাশের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা নিজেরা ২৫ শতাংশ রেখে ভারতীয় এজেন্টকে পাঠিয়ে দিত।

অনলাইন ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ডিবির সাইবার কর্মকর্তা এডিসি সাইফুর বলেন, অপরিচিত ব্যক্তিদের অনলাইনে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা। পাশাপাশি অপরিচিতদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

সর্বশেষ খবর