বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইইউকে আওয়ামী লীগ

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় এ নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সফরে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। গতকাল বিকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সফররত ইইউ প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় সরকারকে এই নির্বাচনটি করতে হচ্ছে। নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাঁদের ব্যাখ্যা প্রতিনিধি দল ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া এবং আগামী সংসদের সম্ভাব্য বিরোধী দলসহ বিভিন্ন বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইইউ দল জানতে চেয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত, নির্বাচনবিরোধীদের অবস্থা কী, তারা মেজর কোনো সমস্যা করতে পারবে কি না, এগুলো নিয়ে অনেক প্রশ্ন, অনেক কথা হয়েছে।

ইইউ প্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের বক্তব্য শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই নির্বাচনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচনটা আমাদের করতে হয়েছে। ২৭টির মতো দল আছে, ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী আছেন। এসব বিষয় তারা পজিটিভলি নিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচন সামনে রেখে তাদের যে দায়িত্ব, তারা আসলে বলার চেয়ে শুনতে আগ্রহী ছিলেন বেশি। তারা তেমন মন্তব্য করতে চাননি। আমরাও ইনসিস্ট করিনি। আমরা আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছি। বিএনপি কেন আসেনি।

ইইউ প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছেন, আওয়ামী লীগের লোকজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কি না? বাইরের কে কে আছেন? অনেকেই কি বিএনপি থেকে এসে প্রার্থী হয়েছেন? স্বতন্ত্র শুধু আওয়ামী লীগের কি না। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আমাদের জবাব দিয়েছি। তারা সেটা শুনেছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বহিষ্কার এবং সদস্যপদ স্থগিত করার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দলীয় যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন চালাতে পারেন। সে অধিকার দেওয়া হয়েছে। যিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন, তিনি যদি আওয়ামী লীগের হন, তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্য নেতা-কর্মীরা কাজ করেন, তাহলে কোনো সমস্যা দেখি না। আমরা নতুন অভিজ্ঞতা বিশ্বকে দেখাতে চাচ্ছি। জনমত নিয়ে এটাও ডেমোক্রেসি। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তারা বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু সরাসরি বহিষ্কার করতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা কাউকে সাপোর্ট দিতে পারি না? দিই তো। কোথাও কোথাও ১৪ দলের নৌকা দিয়েছি। সেখানে আমাদের সাপোর্টের বিষয় তো আছেই। বিএনপি বলবেই ভাগাভাগি। তারা নিজেরাই তো ভুয়া হয়ে গেছে। ভুয়ারা কত কথাই বলবে।

ভোটার উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে। এ নিয়ে আমাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই। একটা প্রবচন আছে...যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। এই নির্বাচনে তারা (বিএনপি) নেই। তাই এই নির্বাচনের চলন বাঁকা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচন পন্ডের সহিংসতা নিয়েও কথা হয়েছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জবাব দিচ্ছে সহিংসতা করে, সেটি আমরা তাদের বলেছি। ভয়ভীতি এসব আছে। তার পরও আমরা বলেছি ভোটের টার্ন আউট সন্তোষজনক হবে। কারণ মানুষের আগ্রহ আছে। সারা দেশের ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে টার্ন আউট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপি একটি বড় দল, টার্ন আউট নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশের স্ট্যান্ডার্ড বজায় থাকবে, সেটাই আমরা তাদের বলেছি।

সহিংসতা বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা বলেছি, সহিংসতা তো হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জবাব দিচ্ছে সহিংসতা দিয়ে। পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে, এটাই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তিনি বলেন, তাদের আসলে মাথাব্যথা ইউক্রেন নিয়ে, গাজা-ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে। কাজেই শক্তিধররা বেশি মাথা ঘামাচ্ছেন এসব নিয়ে। কঙ্গোতে একটা নির্বাচন হয়েছে, কারও সঙ্গে কারও যোগাযোগ নেই। ফলাফল হয়ে গেছে। পাকিস্তানও যে ভালো গণতন্ত্রের উদাহরণ, এটা কেউ বলবে না।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে তেজগাঁওয়ে ঢাকা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আসেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল। এ বৈঠকে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর