শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

জেলা-উপজেলায় বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

ঢাকামুখী রোগীর চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

জেলা-উপজেলায় বেহাল স্বাস্থ্যসেবা

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অচল পড়ে রয়েছে এক্সরে মেশিন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। রংপুর জেলায় আটটি উপজেলার মধ্যে ছয়টি উপজেলা হাসপাতালেই এক্সরে মেশিন নষ্ট। এ চিত্র শুধু রংপুরের নয় সারা দেশের জেলা-উপজেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সংকটের শেষ নেই। অধিকাংশ হাসপাতালে আধুনিক মানের যন্ত্রপাতি নেই। কোথাও যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই চিকিৎসক বা টেকনিশিয়ান। সংশ্লিষ্ট জনবলের অভাবে বিকল হয়ে আছে অনেক যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া ছুটির দিনে বন্ধ থাকে বহির্বিভাগ ও প্যাথলজি। এতে ভোগান্তি বাড়ে রোগীর। ন্যূনতম সেবার জন্য ঢাকার পথে রওনা হয় মানুষ। ফলে ঢাকামুখী রোগীর ভিড় বাড়ছে।

বরিশাল থেকে রাহাত খান জানান, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারসহ সব ধরনের জনবল সংকট চরমে। চতুর্থ শ্রেণির জনবল ঘাটতি থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে তারা। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম জানান, ডাক্তারসহ সব জনবলে ঘাটতি থাকায় কর্মরতদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। চতুর্থ শ্রেণির জনবল ঘাটতির কারণে হাসপাতাল পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

রংপুর থেকে নজরুল মৃধা জানান, রংপুর জেলায় ৮টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলা হাসপাতালেই এক্সরে মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। কাউনিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এক্সরে মেশিনটি স্থাপনের বছরখানেকের মাথায় নষ্ট হয়ে যায়। মেশিনটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার চিঠি দিয়েও কাজ হয়নি। ১০ বছর আগে আর একটি আধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটিও অপারেটরের অভাবে চালানো সম্ভব হয়নি। জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানায়, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় একমাত্র এক্সরে মেশিন রয়েছে। এ ছাড়া পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সরে মেশিনগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রংপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, নষ্ট এক্সরে মেশিন ঠিক করা এবং নতুন মেশিন চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর অবস্থা খুবই নড়বড়ে। চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই কনসালট্যান্ট (সার্জারি), কনসালট্যান্ট (গাইনি) ও অ্যানেসথেশিয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। যার ফলে দীর্ঘদিনেও চালু করা যায়নি অপারেশন থিয়েটার। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ও নার্স পদেও রয়েছে জনবল সংকট। একই অবস্থা হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, বানিয়াচং উপজেলা, লাখাই উপজেলা, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, নবীগঞ্জ উপজেলা, বাহুবল উপজেলা ও মাধবপুর উপজেলা ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নূরুল হক বলেন, সংকট সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, জোড়াতালি দিয়ে চলছে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা ৫০ শয্যার হাসপাতাল। জনবল সংকটে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালের বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিভাগে খাতা-কলমে ডাক্তার থাকলেও তার মধ্যে আটজন রয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেষণে। এ কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জ তৌহিদুল আলম বলেন, হাসপাতালটি মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিদিনই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে এর মধ্যে অনেকের বাড়িই এ উপজেলার নয়, অন্য উপজেলার। এ কারণে অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকে।  নেত্রকোনা প্রতিনিধি আলপনা বেগম জানান, নেত্রকোনা জেলা সদর হাসপাতালে এসে দূর-দূরান্তের অসহায় রোগীরা পড়ছেন হাসপাতালে থাকা দালালদের খপ্পরে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ খুব সচেতন। দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জাহিদুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। সময়মতো চিকিৎসক পাওয়া যায় না, রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা করাতে হয় বাইরে থেকে, বহিঃবিভাগের রোগী টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে বৈকালিক সেবায় বা বাইরের চেম্বারে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান সোহেল বলেছেন চিকিৎসক, কর্মচারী সংকটসহ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও সামর্থ্যরে মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা আছে। শেরপুর প্রতিনিধি মাসুদ হাসান বাদল জানান, লোকবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। আট বছরে যন্ত্রপাতিও এসেছে বেশ। তবে অভিজ্ঞ লোকবলের অভাবে যন্ত্রপাতি রয়েছে প্যাকেট বন্দি। ফলে চিকিৎসাসেবা নিতে সদর অথবা ময়মনসিংহে যেতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তৌফিক আহাম্মেদ বলেছেন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক এবং লোকবল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। যে সব যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে তা জনবলের কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নড়াইল প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন জানান, লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। সার্জারি, গাইনি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. সাজেদা বেগম পলিন বলেন, লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, নার্স সংকটসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, লোকবলের অভাবে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডাক্তারের অভাবে রোগীরা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. মামুন-উর-রশিদ জানান, দীর্ঘদিন এই হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মচারী সংকট রয়েছে।

বার বার আবেদন করার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর