রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বছরজুড়ে বিরোধিতা শেষে সমঝোতা জাতীয় পার্টির

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বছরজুড়ে বিরোধিতা শেষে সমঝোতা জাতীয় পার্টির

বছরজুড়ে রাজপথে সরব না থাকলেও ঘরোয়া সভা-সমাবেশে সরকারের কঠোর সমালোচনায় ব্যস্ত ছিল জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিশেষ করে দলটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরুদ্ধেও তারা নানা সমালোচনা করেন। কিন্তু বছরের শেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ৭ জানুয়ারির ভোটে অংশ নিচ্ছে দলটি।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতায় জাতীয় পার্টি নৌকা প্রতীক ছাড় পেয়েছে ২৬ আসনে। জাতীয় পার্টির আরেকটি আলোচিত বিষয় ছিল বর্তমান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা পার্টির ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদসহ তার অনুসারীদের নির্বাচনে অংশ না নেওয়া।

দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে রংপুর-৩ আসনে নিজ নির্বাচনি আসনে গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। পার্টির শীর্ষনেতারা বলেছেন, ‘অংশগ্রহণমূলক, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে আর সেই নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি ‘জাতীয় দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত হবে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসারও সম্ভাবনা রয়েছে।’ এরপর নানা নাটকীয়তা শেষে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করে ২৫৭ আসনে লাঙল প্রতীকে নির্বাচন  করছে জাতীয় পার্টি। যদিও দুই শতাধিক আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাগুজে-কলমে থাকলেও তারা মাঠে নেই বললেই চলে। পার্টির নেতারা বলছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর জন্যই তারা মাঠে রয়েছেন।  অন্তর্দলীয় কোন্দল ভুলে ২০২৩ সালে ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিবকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দেন প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। একই মঞ্চে রওশন এরশাদ বলেন, আমাদের চলার পথে মান অভিমান থাকবেই। কিন্তু দলের স্বার্থে সব ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে জাতীয় পার্টি একটা পরিবার, দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী সেই পরিবারের সদস্য। দলের যে কোনো সংকট, সমস্যা জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। জাতীয় পার্টি সংবিধান মোতাবেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।

দলের ঐক্যের ডাক দিয়ে ৯ জানুয়ারি রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় ‘জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভক্তি নেই’। পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ ও চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ আছে। সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠেয় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে এবং সে লক্ষ্যে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার জন্য পার্টিকে সুসংগঠিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন তারা।

তবে ঐক্যের কথা বললেও নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসতে থাকে রওশনপন্থি এবং জি এম কাদের পন্থিদের মধ্যে বিরোধ চরম আকারে ধারণ করে। দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন রওশনপন্থিরা। এরই মধ্যে সরকারের কাজের সমালোচনা করে আলোচনায় আসেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, কাউকে ক্ষমতায় নিতে, কারও বি-টিম হতে বা কারও দাসত্ব করতে আমাদের রাজনীতি নয়। আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে রাজনীতি করব। কারও জিম্মি বা ক্রীতদাস হতে রাজনীতি করছি না। রাজনীতিতে বন্ধুত্ব করতে হলে সমানে সমান বন্ধুত্ব করব, চোখে চোখ রেখে বন্ধুত্ব করব।

সরকারের সমালোচনা যখন মুখর জি এম কাদের, ঠিক তখন (৪ মে) রওশন এরশাদ বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশের আগামী নেতৃত্ব বাছাই করে নেবে জনগণ। তাই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে ভিন্নপথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা সফল হবে না। সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে তিনি আরও বলেন, আন্দোলন লড়াইয়ের নামে দেশে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। নতুন পুরাতন সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।

তার এ ঘোষণার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রওশন ও কাদেরের দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে রূপ নেয়। জাতীয় পার্টি ২৮৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও সেখানে রওশনপন্থিদের ঠাঁই না হওয়ায় মনোনয়ন নেননি রওশন এরশাদ। তবে রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে রওশনপন্থিদের বাদ দিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর জি এম কাদেরসহ তার দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। যদিও রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও জাতীয় পার্টি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি।

সর্বশেষ খবর