রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

বর্জ্যে বিষাক্ত গড়াই

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

বর্জ্যে বিষাক্ত গড়াই

যেখানে জনপদের সংস্পর্শ সেখানেই দূষণের শিকার হচ্ছে সুন্দরবনে মিঠাপানির অন্যতম বাহক কুষ্টিয়ার গড়াই নদী। কুষ্টিয়া, কুমারখালী ও খোকসা শহরের প্রায় সব বর্জ্যই ফেলা হচ্ছে নদীতে। এর প্রভাবে শুষ্ক মৌসুমে দূষণের মাত্রা প্রকট হচ্ছে। এতে নদীকেন্দ্রিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবনের বৃক্ষরাজি ও জীববৈচিত্র্যও।

‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান’- অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিখ্যাত কবিতার এ গৌরী নদীরই অন্য নাম গড়াই। পদ্মার প্রধান শাখা নদী। কুষ্টিয়া থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের বিভিন্ন জেলা ঘুরে মধুমতি নামে এ নদী সুন্দরবনে সমুদ্রে মিশেছে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, সমুদ্র থেকে ভূ-পৃষ্ঠে যে লবণাক্ততা উঠে আসতে চায় এ নদীর মিঠাপানির প্রবাহ তা ঠেলে নামিয়ে দেয়। মিঠা পানি ও নোনা পানির সমন্বয় ঘটিয়ে সুন্দরবনের বনভূমি ও প্রাণিকুল রক্ষা করে।

কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ এ নদী কুষ্টিয়ায় নাগরিক বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া শহরের অপরিশোধিত পয়োবর্জ্য সরাসরি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এ নদীতে। ফেলা হচ্ছে নোংরা-আবর্জনাও। সচেতন নাগরিকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি খলিলুর রহমান মজু বলেন, একযুগ আগে কুষ্টিয়া শহরে সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের সময় এর বহির্গমন অংশ নদীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। কোনো পরিশোধন ব্যবস্থা না রেখে এভাবে গৃহস্থালি ও পয়োবর্জ্যরে লাইন নদীতে দেওয়া অপরাধের শামিল। পরিবেশকর্মী গৌতম কুমার রায় বলেন, এসব বর্জ্যে নদীর মাছসহ সব জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি বিরাট ক্ষতির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। তাঁত-সমৃদ্ধ কুমারখালীতে রঙিন শিল্পবর্জ্য সরাসরি ফেলা হচ্ছে গড়াই নদীতে। কেমিক্যাল মিশ্রিত এ বিষের ধারা বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নদী। শিল্প বাঁচিয়ে রেখে দূষণ কমাতে ইটিপি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন পরিবেশবাদীরা। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ বারবার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কিছুই করা হয়নি। খোকসায় এ নদীর বুকে সরাসরি ফেলা হচ্ছে সব ধরনের বর্জ্য। পৌরসভার নিজস্ব জায়গা না থাকায় নদীর বুকে বর্জ্যরে স্তূপ জমছে। স্থানীয় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীর তীরে বর্জ্যরে স্তূপ টিলার আকার ধারণ করে। এখান থেকে গড়িয়ে সব ধরনের বর্জ্য নদীর স্রোতধারায় মিশে যাচ্ছে। এ ছাড়া খোকসা বাজারের চারটি বড় ড্রেনের দূষিত পানি সরাসরি নদীতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। চরম দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে নদী থেকে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত উপায়ে বালু উত্তোলন করায় কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। আর কুষ্টিয়া, কুমারখালী ও খোকসা শহরে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষে কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে থাকা হাবিবুল বাশার বলেন, দূষণ রোধে উদ্যোগ নিতে বিভিন্ন দফতরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, সুন্দরবনের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ নদীর দখল-দূষণ রক্ষায় সচেষ্ট প্রশাসন। এবার সংশ্লিষ্টদের দূষণ বন্ধে টাইম ফ্রেম বেঁধে দিয়ে উদ্যোগ নিতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আর এসডিজির স্থানীয় গোল হিসেবে ধরা হয়েছে কুমারখালীর তাঁতশিল্পের উন্নয়ন। সে কারণে দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির জন্য সেখানে বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা রাখা দরকার। এ ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

সর্বশেষ খবর