মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নতুন বই পেল শিক্ষার্থীরা

ছাপা হয়নি অষ্টম-নবমের অনেক বই

আকতারুজ্জামান

নতুন বই পেল শিক্ষার্থীরা

বছরের প্রথম দিনে সারা দেশে উৎসব করে নতুন বই তুলে দেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের হাতে। বিদ্যার্থীদের কাছে নতুন বই যেন নতুন বছরের উপহার। নতুন বইয়ের উচ্ছ্বাসে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হলেও মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে বেশির ভাগ বই না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো স্কুলে অষ্টম আর নবম শ্রেণিতে কোনো বই-ই দেওয়া হয়নি, এমনও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। আর ছাপার কাজ দ্রুত শেষ করতে গিয়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

দেশের অন্যান্য স্কুলের মতো নীলফামারী সদরের রামগঞ্জ দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়েও বই উৎসবের আয়োজন করা হয় গতকাল। কিন্তু এ স্কুলের অষ্টম ও নবম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থীই বছরের প্রথম দিনে কোনো বই পায়নি। বই ছাড়াই ফিরতে হয়েছে তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান, তাদের জানানো হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের পর এ দুই শ্রেণির বই পাওয়া যাবে। তবে এ স্কুলে অন্য সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা গতকাল নতুন বই পেয়েছে।

একই চিত্র দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন স্কুলে। অষ্টম আর নবম শ্রেণির বেশির ভাই বই স্কুলগুলোয় পৌঁছেনি। এমন ঘটনা রাজধানীতেও। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক    এক শিক্ষক জানান, এ প্রতিষ্ঠানে অষ্টমের মাত্র চারটি বই পেয়েছে ছাত্রীরা। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও সব বই পায়নি। রাজধানীর ডেমরার সামসুল হক খান স্কুলের অষ্টম শ্রেণির কোনো শিক্ষার্থী গতকাল বই পায়নি। নবম শ্রেণিরও পৌঁছেনি সব বই। তবে এ স্কুলে অন্য শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা বই পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ের চূড়ান্ত পান্ডুলিপি ছাপাখানাগুলোয় দেরিতে দেওয়ার কারণেই এসব বই ছাপা ও সরবরাহে দেরি হচ্ছে। এ দুই শ্রেণির প্রায় দেড় কোটি বই এখনো ছাপা শেষ করতে পারেনি ছাপাখানাগুলো। জানা গেছে, এ দুই শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু হচ্ছে চলতি শিক্ষা বছর। জানা গেছে, গত বছর নতুন কারিকুলামের নানা ভুলভ্রান্তি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। এবার সমালোচনা এড়াতে এই দুই শ্রেণির কয়েকটি বই অধিকতর যাচাইবাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচনের পর এ বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই মূলত বিলম্ব করেছে মন্ত্রণালয়। এদিকে বেশির ভাগ বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপা হয়েছে। প্রাথমিকে বই উৎসব উপলক্ষে গতকাল মিরপুরে কেন্দ্রীয়ভাবে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। তবে মাধ্যমিকে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো বই উৎসব হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে বই উৎসব না হলেও সারা দেশের স্কুলে স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।

মিরপুরে প্রাথমিকের বই উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি শিক্ষা বছরে ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি নতুন বই বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রথম থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত সারা দেশে শতভাগ বই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির মোট ১৫০ লটের মধ্যে ১০০ লটের বই চলে গেছে। নবমেও অল্প কিছু বই পাঠানো বাকি রয়েছে। অষ্টম ও নবম শ্রেণি মিলিয়ে মাত্র দেড় কোটি বই পাঠানো বাকি আছে, যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৭ জানুয়ারি) আগেই পৌঁছে যাবে।

 

সর্বশেষ খবর