মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আচরণবিধি লঙ্ঘনে আরও কয়েকজনকে শোকজ

প্রতিদিন ডেস্ক

আচরণবিধি লঙ্ঘনে আরও কয়েকজনকে শোকজ

দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন ঘটছেই। এ অভিযোগে কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হবিগঞ্জের স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, কুষ্টিয়ায় ১৪-দলীয় জোট মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর নির্বাচনি এজেন্ট আবদুল আলীম স্বপন, কুমিল্লার তিনজন ইউপি চেয়ারম্যান। এ ছাড়া আরও কয়েকটি বিষয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

হবিগঞ্জ : নির্বাচনি পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহারের অভিযোগে হবিগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আজকের মধ্যে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও হবিগঞ্জ সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল। নোটিসে বলা হয়, আচরণ বিধিমালা মোতাবেক প্রার্থীর ব্যানার ও পোস্টারে নিজের ছবি, প্রতীক ও দলীয় প্রার্থী হলে একই সঙ্গে দলপ্রধানের বাইরে অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। আপনি পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করে উল্লিখিত বিধি লঙ্ঘন করেছেন।

কুষ্টিয়া : অকথ্য গালিগালাজ করা হয়েছে জানিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসনে ১৪-দলীয় জোট মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হাসানুল হক ইনুর নির্বাচনি এজেন্ট আবদুল আলীম স্বপনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া-২ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. রেজওয়ানুজ্জামান গতকাল বিকালে নোটিসটি পাঠিয়েছেন। আজ দুপুর ১২টায় আবদুল আলীম স্বপনকে তাঁর লিখিত বক্তব্যসহ কমিটিপ্রধানের কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আবদুল আলীম স্বপন এখনো নোটিস পাননি বলে জানিয়েছেন।

কুমিল্লা : কুমিল্লা-৬ সদর আসনের তিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানকে শোকজ করেছে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি। গতকাল কুমিল্লা-৬ আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান যুগ্ম জেলা জজ মো. সিরাজ উদ্দিন ইকবাল এ শোকজ করেন। ভাতার কার্ড আটকে রেখে নৌকায় ভোট আদায়ের অভিযোগে এ শোকজ করা হয়। অভিযুক্তরা হলেন আমড়াতলী ইউনিয়নের কাজী মো. মোজাম্মেল হক, পাঁচথুবীর হাসান রাফি রাজু ও জগন্নাথপুরের মামুনুর রশিদ মামুন। পৃথক তিন নোটিসে উল্লেখ করা হয়, কুমিল্লা-৬ সদর আসনে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা অভিযোগ করেন, আপনারা বিভিন্ন ভাতার কার্ড আটকে রেখে নৌকায় ভোট দেওয়ার হুমকির দিয়েছেন। নৌকায় ভোট দেওয়ার পর কার্ড ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন।

খুলনা : প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের বিতর্কিত দাবি করে অন্যত্র নির্বাচনি কাজে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন খুলনা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। গতকাল তিনি খুলনা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলায় ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং ২০২১ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে তাঁর ও তাঁর নিজস্ব প্রার্থীকে কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী করেছেন। এর মধ্যে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান, শিক্ষা অফিসার দিবাশীষ বিশ্বাস, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আশরাফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে বিতর্কিত পদ্ধতিতে নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এসব কর্মকর্তা ও তাঁর ভাইপো শিক্ষক দিবাশীষ চন্দসহ অনেককে কাজে লাগিয়ে নৌকার প্রার্থী মোস্তফা সরোয়ারকে কারচুপির মাধ্যমে পরাজিত করার অভিযোগ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনেও এসব কর্মকর্তাকে বিভিন্ন প্রকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাঁর মিশন বাস্তবায়নে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দু-তিন বার বদলি হলেও পুনরায় ডিও লেটার দিয়ে তাদের ডুমুরিয়ায় ফিরিয়ে আনা হয়। শান্তিপূর্ণ ভোটাররা আশঙ্কা করছেন এসব কর্মকর্তা থাকলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’

নাটোর : নাটোরের লালপুরে তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলে তাঁদের নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। গতকাল এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তা হলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার সাদ আহম্মেদ শিবলী, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী রবিন আহমেদ ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কোনো প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন এটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা লক্ষ্য করেছি তফসিল ঘোষণার পরপরই তাদের আচার-আচরণ, কর্মকাণ্ড, কথাবার্তায় নৌকা প্রতীকের পক্ষে অবস্থান সুস্পষ্ট।’ এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, ‘অভিযোগপত্র এখনো পৌঁছায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর