মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভয়ংকর শব্দদূষণে নাজেহাল শিশু বৃদ্ধ রোগী ও পশুপাখি

থার্টিফার্স্টে কাজ হয়নি পুলিশের নির্দেশনায়ও মেট্রোরেলের তারে আটকে ছিল ৩৮ ফানুস

নিজস্ব প্রতিবেদক

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষেধাজ্ঞার পরও এবার থার্টিফার্স্ট রাতে ভয়ংকর শব্দদূষণের শিকার হতে হয় রাজধানীবাসীকে। আতশবাজি পোড়ানোর কারণে ঢাকার বায়ু হয়ে পড়ে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। মাত্রাতিরিক্ত শব্দ এবং বায়ু দূষণের কারণে শিশু ও বৃদ্ধদের এবারও   নাজেহাল হতে হয়। এ ছাড়া মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধ উপেক্ষা করে মেট্রোরেলের ১ কিমির মধ্যে ফানুস ওড়ানো হয়। এ অবস্থায় মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ থার্টিফার্স্ট রাতেই ৩৮টি ফানুস মেট্রোরেলের তারের ওপর থেকে সরিয়ে নেয়। নতুন বছরের (২০২৪ সাল) প্রথম ঘণ্টায় শব্দদূষণ হার ৩০ ডিসেম্বরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এ সময় বেশির ভাগ শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবেলের মধ্যে ছিল। আর ৭০ ডেসিবেলের অধিক শব্দ মানুষসহ পশুপাখির কানের বধিরতা সৃষ্টি করতে সক্ষম। এমনকি এ শব্দ গর্ভপাত, শিশুমৃত্যু ও বয়স্কদের হার্টের ঝুঁকিও বাড়ায়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর গবেষণা দল সাত বছর ধরে ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বায়ু ও শব্দ দূষণের তীব্রতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। গতকাল ক্যাপস এ তথ্য জানায়।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় নববর্ষ উদ্যাপনের কয়েক ঘণ্টা আগে ও পরে বায়ু এবং শব্দ দূষণের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। ২০২৪ সালের নববর্ষের রাত ১১টা থেকে ১২টার তুলনায় পরবর্তী এক ঘণ্টার বায়ুদূষণের পরিমাণ প্রায় ৬৪ মাইক্রোগ্রাম (৩৫%) বৃদ্ধি পায়। এবার সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ (বস্তুকণা ২.৫) রেকর্ড হয় ২৪৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার; যা বায়ুমান সূচকে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত। আতশবাজি, পটকা বা এ-জাতীয় শব্দ সৃষ্টিকারী বস্তু সাধারণত পটাশিয়াম পারক্লোরেট, বিষাক্ত বেরিয়াম নাইট্রেট, পারলাইট পাউডার, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম খাদ ও মাটি-পাথর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয়। এগুলো পোড়ানোর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমানে বায়ুদূষণকারী পদার্থ নির্গত হয়। যার মধ্যে আছে বস্তুকণা ২.৫ ও বস্তুকণা ১০, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ইত্যাদি। এ দূষণগুলো হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে। ক্যাপসের গবেষক দল মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখতে পায়, রাত সাড়ে ১১টায় শুরু করে ভোর ৫টা পর্যন্ত আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়েছে রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত।

এ ছাড়া নতুন বছরের প্রথম দিনই ঢাকার বাতাসের মান ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ ছিল। এদিনও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় অবস্থান করেছে ঢাকা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) স্কোর হিসেবে গতকাল ঢাকার বায়ুমানের স্কোর ছিল ২৪৬। এ স্কোর নিয়ে ঢাকা বায়ুদূষণের দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে অবস্থান করছিল।

জরুরি সেবা ৯৯৯- আসে ৯৭১টি কল : আবার থার্টিফার্স্ট নাইটে সারা দেশে উচ্চৈঃস্বরে লাউড স্পিকারে গানবাজনা ও শব্দদূষণ সংক্রান্ত ৯৭১টি কলের বিপরীতে সেবা দিয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরী এলাকায় ২৩৭টি কলের বিপরীতে সেবা দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পুলিশ পরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা) আনোয়ার সাত্তার। তিনি বলেন, ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত ৯৯৯-এ শব্দদূষণসংক্রান্ত ফোনকল আসে ৫২৬টি। যার মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরী এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১০৭ জন। রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে গতকাল দুপুর ১টা পর্যন্ত শব্দদূষণসংক্রান্ত ৪৪৫টি কল এসেছে, যার মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরী এলাকা থেকে সেবাপ্রত্যাশী ছিলেন ১৩০ জন। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে লাউড স্পিকারে গানবাজনা বন্ধ করে শব্দদূষণসংক্রান্ত অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করে। নতুন বছর বরণ করে নিতে এবারও ৩১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ফানুস ওড়ানো হয়। এ ফানুসগুলো মেট্রোরেলের তারে গিয়ে আটকায়। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকায় কোনো সমস্যা হয়নি। গতকাল মেট্রোরেল পরিচালনকারী ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, ডিএমটিসিএলের কর্মীরা রাত ৩টার পর থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত টহল দিয়েছে। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় মেট্রোরেলের তারে আটকে থাকা ৩৮টি ফানুস অপসারণ করা হয়। তিনি জানান, বৈদ্যুতিক তারে কোনো ধরনের বস্তু বিশেষ করে মেটালিক কিছু থাকলে তা সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্পার্কিং হলে রেল চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সর্বশেষ খবর