বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এক বছরে ৯৯৩ রাজনৈতিক সহিংসতা

অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন ৯৬ জন, আহত ৯ হাজার ২২৮

সাখাওয়াত কাওসার

এক বছরে ৯৯৩ রাজনৈতিক সহিংসতা

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় গত বছরের ২৫ এপ্রিল রাতে গুলি করে হত্যা করা হয় জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব ইমামকে। নোমান লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে একটি সম্পাদক পদে ছিলেন। পুলিশি তদন্তে উঠে আসা এবং নিহতের পরিবারের সদস্যদের প্রধান সন্দেহভাজন কাশেম জিহাদী এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হননি। গত ২ মে বরগুনা সদর উপজেলার পাতাকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম পনুকে প্রতিপক্ষের লোকজন নৃশংভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, ২৪ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ডে নুর মোস্তফা বজল (৫৫) নামে এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই দিন মাদারীপুরে এসকেন্দার খাঁ নামে একজন রাজনৈতিক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

উল্লিখিত কয়েকটি ঘটনা ছাড়াও বছরের বেশির ভাগ সময় ছিল রাজনৈতিক সংঘাতে উত্তাল। গত বছর রাজধানীসহ সারা দেশে ৯৯৩টি রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয়েছেন ৯৬ জন। আহতের সংখ্যা ৯ হাজার ২২৮। যার অধিকাংশই রাজনৈতিক সভাসমাবেশ কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে ঘটেছে বলছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচআরএসএসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের শেষ মাসে (ডিসেম্বর) নির্বাচনি সহিংসতা ঘটেছে ১৩৮টি; যাতে ১০ জন নিহত ও ৬৫৯ জন আহত হয়।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, রাজনৈতিক ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত বছর অনেক প্রাণহানির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত চলমান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে গত বছরের ২৮ অক্টোবর-পরবর্তী দেশে ব্যাপক নৈরাজ্য ও সংঘাত লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি সরকারবিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীরাও প্রতিপক্ষের ওপর সহিংস হয়ে ওঠেন। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে দল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল?্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক হিসাব করলে গত বছর খুব একটা ভালো যায়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রতিও খুব একটা ভালো ধারণা ছিল না সাধারণ মানুষের। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কোনো রাজনৈতিক দলকে খুশি করার জন্য আচরণ করলে সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা কমে যাবে।’ অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে খুনোখুনি বাড়ে। এ সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক শিষ্টাচারের চর্চা না করলে নিজ দলের মধ্যেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

গণমাধ্যমের তথ্যের বরাত দিয়ে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বলছে, ২০২৩ সালে রাজনৈতিক সংঘাতে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত এবং আহত হয়েছে ৬ হাজার ৯৭৮ জন। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতা ঘটেছে ১০২টি। এতে নিহত হয়েছে ছয়জন, আহত হয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ জন। সহিংসতার বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ। গত বছরের এপ্রিলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর এক প্রতিবেদন বলা হয়, এপ্রিলে বিভিন্ন জেলায় ৪০টি রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪৬৯ জন। নির্বাচনি, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভাসমাবেশে বাধার ঘটনায় মোট ৪৬১ জন আহত ও আটজন নিহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে তিনজন ক্ষমতাসীন দলের, একজন মুদি দোকানদার, একজন টাইলস শ্রমিক, একজন বিএনপি কর্মী, দুজন সাধারণ নাগরিক। এপ্রিলের কয়েকটি ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনায় আসে। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে প্রতিপক্ষের সদস্যদের হাতে খুন হন তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন। ২৪ এপ্রিল রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার খানসামারহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোনা মিয়া (৪৫) নামে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক কর্মী মারা যান। ২৩ এপ্রিল রাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ সুমন সবুজ নিজ বাড়িতে অবস্থানকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। ১৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা যুবলীগের সাবেক শ্রমবিষয়ক সহসম্পাদক ও শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর