বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আপিল বিভাগ

শেষ আইনি লড়াইয়েও ফিরল না শাম্মী-সাদিকের প্রার্থিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেষ আইনি লড়াইয়েও ফিরল না শাম্মী-সাদিকের প্রার্থিতা

আইনি লড়াইয়ের শেষ ধাপেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ ও বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। গতকাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে তা খারিজ করে দেন। এদিকে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আবেদনের ওপর শুনানি পিছিয়েছে। আর তথ্য গোপন করে আদেশ নেওয়ার দায়ে ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিকের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ।

শাম্মী আহমেদ : দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার দায়ে বাতিল হওয়া প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিটার্নিং অফিসার, নির্বাচন কমিশন ও হাই কোর্টে আবেদন করেও বিফল হন বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহমেদ। এমনকি চেম্বার আদালতে গিয়েও সাড়া মেলেনি। পরে প্রার্থিতা ফিরে পেতে লিভ টু আপিল করেন তিনি। গতকাল সেই আবেদনও খারিজ হয় আপিল বিভাগে।

সাদিক আবদুল্লাহ : দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে বরিশাল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর প্রার্থিতা বাতিলে ইসিতে আপিল করেছিলেন ওই আসনে নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম। সাদিকের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। হাই কোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। তবে জাহিদ ফারুক চেম্বার আদালতে আবেদন করলে আবারও আটকে যান সাদিক আবদুল্লাহ। অবশেষে ভোটে ফিরতে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন সাদিক। গতকাল ওই আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় তাঁর আর ভোটে ফেরা হলো না।

শামীম হক : ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের শামীম হকের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আবেদনের ওপর শুনানি পিছিয়েছে। এ কে আজাদের পক্ষে আইনজীবীর সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী এ কে আজাদের আবেদনে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল করেছিল নির্বাচন কমিশন। শামীম হক রিট করলেও তা খারিজ হয়। তবে চেম্বার আদালতের নির্দেশে ভোটের মাঠে ফেরেন তিনি। পরে শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন এ কে আজাদ।

হাসিবুর রহমান মানিক : তথ্য গোপন করে আদেশ নেওয়ায় ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিকের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। গতকাল প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ঋণখেলাপের অভিযোগে মানিকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনে আপিল করেও সাড়া না পেয়ে রিট করেন তিনি। হাই কোর্টের নির্দেশে ভোটের মাঠে ফিরলেও তথ্য গোপনের অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশন চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে। পরে চেম্বার জজ আদালত তাঁর আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে ভোটের মাঠ থেকে ছিটকে পড়লেন মানিক।

আলম আহমেদ : গাজীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাজউদ্দীন আহমদের ভাগনে শিল্পপতি আলম আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমির লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

ঋণখেলাপের অভিযোগে আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিল এবং হাই কোর্টে সাড়া না পেলেও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের নির্দেশে ভোটের মাঠে ফেরেন আলম। তবে আলমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। রিমির আবেদন খারিজ হওয়ায় আলম আহমেদের প্রার্থিতা বহালই থাকল।

খন্দকার রুহুল আমিন : নোয়াখালী-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে তিনি আর ভোটের মাঠে ফিরতে পারছেন না। দ্বৈত নাগরিকত্বের তথ্য গোপন করায় খন্দকার রুহুল আমিনের প্রার্থিতা বাতিল করতে ইসিতে আবেদন করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান। তাতে সাড়া না পেয়ে রিট করেন তিনি। দুই সংস্থার প্রতিবেদনে রুহুল আমিনের দ্বৈত নাগরিকত্বের প্রমাণ মেলায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করেন হাই কোর্ট। পরে প্রার্থিতা ফিরে পেতে চেম্বার আদালতে আবেদন করেন রুহুল আমিন। পরে গতকাল রাতে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

এনামুল হক বাবুল : যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে করা আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগ। ফলে বাবুলের প্রার্থিতা বহাল রয়েছে। ঋণ খেলাপের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিত কুমার রায়ের আবেদনে বাবুলের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। পরে হাই কোর্টে গিয়ে সাড়া না পেলেও আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের নির্দেশে ভোটের মাঠে ফেরেন তিনি।

মুহিবুর রহমান : সিলেট-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি এবং প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাই কার্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেননি আপিল বিভাগ। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ না করায় নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করেছিল। পরে হাই কোর্টের নির্দেশে ভোটের মাঠে ফেরেন তিনি। হাই কোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় নির্বাচন কমিশন।

শেখ আকরাম হোসেন : খুলনা-৫ আসনে স্বতন্ত্র শেখ আকরাম হোসেনের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের আবেদনে সাড়া দেননি আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তাঁর প্রার্থিতা ফেরত দিয়ে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছেন। ফলে তাঁর প্রার্থিতা বহাল রয়েছে। ঋণ খেলাপের অভিযোগে খুলনা রিটার্নিং অফিসার তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। আপিলের পর নির্বাচন কমিশনও তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করে। এরপর তিনি হাই কোর্টে রিট করেন।

আতাউর রহমান প্রধান : লালমনিরহাট-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি আতাউর রহমান প্রধানের প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। অবসর গ্রহণের পর তিন বছর পার হয়নি, এমন অভিযোগ তুলে আতাউর রহমান প্রধানের প্রার্থিতা বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোতাহার হোসেন। তবে সেখানে সাড়া না পেয়ে রিট করেন তিনি। হাই কোর্টেও সাড়া না পেয়ে গিয়েছিলেন আপিল বিভাগে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর