বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

রেমিট্যান্সের গতি রাখাই চ্যালেঞ্জ

♦ এক বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে আড়াই শতাংশ ♦ বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ বিশ্লেষকদের

শাহেদ আলী ইরশাদ

চলতি বছরের জুলাই থেকেই কমতে শুরু করে প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রণোদনা বাড়ানোর ফলে অক্টোবর থেকে বাড়তে শুরু করেছে প্রবাসী আয়। রেমিট্যান্সের এ গতি ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। ব্যাংকাররা বলছেন, বছরের শেষ দিকে এসে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অভিবাসী শ্রমিকরা ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত জুলাই ও আগস্টে এসেছিল যথাক্রমে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার। আর জুনের রেমিট্যান্স ছিল ২.১ বিলিয়ন ডলার। তবে অক্টোবরে রেমিট্যান্স আবারও বাড়তে শুরু করে, সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।

সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের বছরের চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, ডলারের বিনিময় হার এবং প্রণোদনা বাড়ানোর উদ্যোগে অক্টোবরে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ওই মাসে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার, আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩০ শতাংশ। পরের মাস নভেম্বরে রেমিট্যান্স বাড়লেও তা আগের মাস অক্টোবরের চেয়ে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কম ছিল। ডিসেম্বরে ফের ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করতে সরকার নগদ প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছে। তফসিলি ব্যাংকও এর সঙ্গে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ পর্যন্ত যোগ করে প্রণোদনা দিচ্ছে। রেমিট্যান্স পাঠাতে অন্যান্য শর্তও শিথিল করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর থেকে এক দিনে যে কোনো অঙ্কের রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কাগজপত্র জমার বাধ্যবাধকতাও আর রাখা হয়নি। এ ছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলের নিজস্ব এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে চার্জ তুলে দেওয়া হয়েছে। এত চেষ্টার পরও রেমিট্যান্সে কাক্সিক্ষত হারে না বাড়ার জন্য ‘হুন্ডি ব্যবসাকে’ দায়ী করেছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে প্রবাসী আয় বাড়াতে বিনিময় হার উন্মুক্ত করা উচিত। রিজার্ভের পতন ঠেকাতে রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয়ের ভারসাম্য আনতে হবে।

তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, খোলাবাজার ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দরের পার্থক্যের কারণেই বৈধ চ্যানেলে কাক্সিক্ষত মাত্রায় রেমিট্যান্স আসছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের সর্বোচ্চ দর ১১০ টাকা হলেও খোলাবাজারে তা ১২০ টাকার ঘরেই থাকছে। আর আমদানিতে ডলারের দর এখনো ১২০ টাকার ওপরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশের রিজার্ভ মূলত সমৃদ্ধ হয়েছিল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভিত্তি করে। এক বছরের বেশি সময় পর ২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের দেনা পরিশোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে কমেছে রিজার্ভ। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত দুই বছর ধরেই আমরা নানা রকম চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছি। প্রবাসী আয় বাড়াতে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। প্রবাসীরা কোনো ধরনের চার্জ ছাড়াই দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন। সরকারি আড়াই শতাংশের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফলে প্রবাসীরা এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের ভালো দাম পাচ্ছে। আশা করছি আগামীতে প্রবাসী আয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো বছরের শেষের দিকে ডলারের প্রবাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে। রেমিট্যান্স বাড়াতে এসব উদ্যোগ চলমান রাখা উচিত।

সর্বশেষ খবর