দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৭ জানুয়ারি রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট চলবে। ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও দলের প্রচারণা শেষ হবে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায়। জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার। ভোট হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে। এদিন ২৯৯ আসনে ভোট হবে। নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে পরে ভোট হবে। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা নির্বাচনি এলাকায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আজ ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ৯ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত সভা, সমাবেশ, মিছিল ও শোভাযাত্রা করা যাবে না। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাহী এবং বিচারিক হাকিম নির্বাচনি মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আজ থেকে মাঠে নামবেন। ভোটের পরের দিন পর্যন্ত তারা থাকবেন। নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং অফিসারদের সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। কমিশনও ঢাকা থেকে সব কিছু মনিটরিং করছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল খোলা হয়েছে।
নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জেলায় জেলায় পৌঁছে গেছে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনি সামগ্রী। জরুরি প্রয়োজনে পরিবহন কাজের জন্য প্রস্তুত রয়েছে হেলিকপ্টার। এদিকে ব্যালট বাক্সসহ প্রাথমিক নির্বাচনি মালামাল আগেই পৌঁছে দিয়েছে কমিশন। ইসির কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য এলাকার ব্যালট পেপারসহ অধিকাংশ আসনে ব্যালট বিতরণ হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যালট পেপার পৌঁছাতে হেলিকপ্টারও প্রস্তুত রয়েছে।
ভোটে প্রার্থী এখন ১৯৭০ জন, দল ২৮টি : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৯৭০ জন প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন। এদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী রয়েছেন ৪৩৬ জন আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ১৫৩৪ জন। মোট প্রার্থীর মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন অন্তত ৯৩ জন ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রার্থী ৭৯ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর ১৮৯৫ জনের সঙ্গে আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া ৭৬ জন যুক্ত এবং নির্বাচন কমিশন একজনের প্রার্থিতা বাতিলের পর এ সংখ্যা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট হবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারে। এদিন ২৯৯ আসনে ভোট হবে। নওগাঁ-২ আসনের একজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানে পরে ভোট হবে।ইসির অতিরিক্ত সচিব জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দাঁড়ায় ১৮৯৫ জন। এরপর আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পান ৭৬ জন। আর নির্বাচন কমিশন একজনের প্রার্থিতা বাতিল করে। এখন ৩০০ আসনে ১৯৭০ জন প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে নওগাঁ-২ আসনের দুই প্রার্থীও রয়েছেন; তবে এ আসনে প্রার্থীর মৃত্যুর পর নতুন তফসিলে ভোটের তারিখ নির্ধারণ হবে ও প্রার্থীও যুক্ত হতে পারে। ২৯৯ আসনের জন্য ব্যালট পেপার মুদ্রণও শেষ হয়েছে বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি দল। ভোটের মাঝপথে দলীয় কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে গণতন্ত্রী পার্টির ১০ জনের প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি। পরে আদালতের আদেশে পার্টির ১০ জনকে যুক্ত করায় ২৮টি দলের অংশগ্রহণ চূড়ান্ত হয়।
কোন দলের কত প্রার্থী : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকছে ২৮টি দল। আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর এখন দলীয় প্রার্থী ১৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। এবার সবচেয়ে বেশি ২৬৬ জন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপরই রয়েছে জাতীয় পার্টি, তাদের প্রার্থী রয়েছেন ২৬৫ জন। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩৫ জন প্রার্থী রয়েছেন ‘সোনালি আঁশ’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আসা তৃণমূল বিএনপির। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে এ ভোট হচ্ছে।
২৮ রাজনৈতিক দল থেকে যত প্রার্থী : আওয়ামী লীগ (নৌকা) ২৬৬ জন; জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল) ২৬৫ জন; জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১ জন; তৃণমূল বিএনপি (সোনালি আঁশ) ১৩৫ জন; ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম) ১২২ জন; বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ৯৬ জন; জাসদ (মশাল) ৬৬ জন; বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৭৯ জন; বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৬৩ জন; বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৪৫ জন; বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙ্গর) ৫৬ জন; বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) ৩৮ জন; ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪২ জন; ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯ জন; বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭ জন; কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩০ জন; বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ২৬ জন; গণফ্রন্ট (মাছ) ২১ জন; জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ১৩ জন; বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৬ জন; বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১১ জন; বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা) ১০ জন; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) পাঁচজন; গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১০ জন; গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) নয়জন; বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (চাকা) চারজন; বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (কুঁড়েঘর) পাঁচজন; বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত পাঞ্জা) চারজন ও স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন। এ নির্বাচনে প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৮ লাখ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ১ লাখ অতিরিক্ত সরকারি কর্মকর্তা স্ট্যান্ডবাই থাকবেন। আনসার ও ভিডিপি, র্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য মাঠে আছেন। তারা মাঠে থাকবেন ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জাজেস মাঠে আছে। এখন পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত ৬০০ অভিযোগ এসেছে কমিশনের কাছে। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।