শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আশ্চর্যসুন্দর পাহাড় ফুরামন

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

আশ্চর্যসুন্দর পাহাড় ফুরামন

শুভ্র সাদা মেঘ। কুয়াশা যেন বরফের ভাসমান ভেলা। আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়। কাকভোরে কুয়াশার বুক চিরে টকটকে লাল সূর্যের আলোর ঝলমল। অতিথি পাখির খুনসুটি। আর পাহাড়জুড়ে এদের কিচিরমিচিরে প্রাণের উচ্ছ্বাস। এরই টানে প্রেমিকযুগল আর তরুণ-তরুণীরা দূরদূরান্ত থেকে ছুটে যাচ্ছে সেখানে। জায়গাটি রাঙামাটির আশ্চর্যসুন্দর পাহাড় ফুরামন। প্রশাসনিকভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এখনো স্বীকৃতি না পেলেও কমতি নেই পর্যটকের আনাগোনার। শীত কিংবা বর্ষা যে কোনো ঋতুতেই ফুরামনের রূপবৈচিত্র্য দেখতে মানুষের উপস্থিতি ঘটে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়ির একটি পাহাড়ের নাম ফুরামন। শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়টি। উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫১৮ ফুট। সড়ক যোগাযোগ নেই। পাহাড়জুড়ে বন আর জঙ্গল। তাই হেঁটে উঠতে হয়। সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে দেখা মেলে বৈচিত্র্যময় রাঙামাটির অন্যরকম চিত্র। রাঙামাটি শহরকে মুহূর্তে মনে হয় শিল্পীর পটে আঁকা ছবি। পাহাড় ও হ্রদের মিলনমেলা। প্রতিটি পরতে লুকিয়ে আছে নয়নাভিরাম দৃশ্য। অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে ফুরামনের পরিচিতি লাভে বেশি সময় লাগেনি। হিমশীতের আমেজে এর সৌন্দর্যের টানে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক। বন্ধুবান্ধব, স্বজনপরিজন নিয়ে পর্যটকরা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে।

তাহসিন ও সালাউদ্দিন আরিয়ান জানান, বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে ফুরামন পাহাড়ে ভ্রমণ করি। ফুরামনে যেতে হলে ফজরের আজানের আগেই রওনা দিতে হবে। কারণ ওই পাহাড়ে হেঁটে উঠতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা প্রয়োজন। পাহাড়ের পাশে একটি বৌদ্ধবিহার রয়েছে। তাই কিছুটা সড়কে পাকা ও কাঁচা সিঁড়ি আছে। ৪১৩টি পাকা ও বেশ কিছু মাটির সিঁড়ি রয়েছে। প্রথমে একটু ক্লান্তিভাব থাকলেও ফুরামনের চূড়ায় ওঠার পর মনেই থাকবে না ওই ক্লান্তির কথা। কারণ ফুরামনের সৌন্দর্য এতটাই যে তা কল্পনা করা যাবে না। প্রকৃতির এমন রূপমাধুরী দেখে মনে হবে আপনি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা মেঘালয়ে চলে এসেছেন। তবে ফুরামনে ওঠার আগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে। যেমন বাঁশের লাঠি (যা হাঁটার পথে সহযোগিতা করবে), স্যালাইন, পানি ও হালকা খাবার। নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন পর্যটক মো. ফারহান মাহমুদ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ক্লান্তির পথ পাড়ি দিয়ে হঠাৎ স্নিগ্ধ বাতাসে ভেসে আসা পাহাড়ি ফুলের গন্ধে সত্যি প্রাণ জুড়িয়ে গেল। তারপর চোখে পড়ল আবছা ভোরের আলোয় হিরে বসানো সবুজ ঘাসে শিশিরের বিন্দু বিন্দু জল। মুহূর্তে মনে হয় শিল্পীর ক্যানভাসে আঁকা ছবি। সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা আসে। এ ফুরামন পাহাড়কে ঢেলে সাজানো গেলে রাঙামাটির পর্যটন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।’

 

 

 

সর্বশেষ খবর