শুক্রবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
আলোচনা সভা

নির্বাচনের পর সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচনের পর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবিলার মধ্য দিয়ে দেশের স্থিতিশীলতা ধরে রাখা সম্ভব হবে। আর এটাই মানুষের প্রত্যাশা।

গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আয়োজনে ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : জনপ্রত্যাশা’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতা চাই, সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নৌকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে যে ঝগড়াঝাঁটি দেখা যাচ্ছে, তা যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নির্বাচন ঠেকাতে যে ধরনের সন্ত্রাসী আগ্রাসন চলছে, সেটা চলতে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতেই হবে। নীতির ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। নির্বাচনের পর সেটা জোরদার করতে হবে। ব্যাংকিং খাতে যে সমস্যা সেটা আমরা সমাধান করতে পারছি না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা শুধু খাতা-কলমে না রেখে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, নির্বাচনের পর সহিংসতা হওয়ার একটি আশঙ্কা আছে। এর জন্য (আওয়ামী লীগের) দলীয় নেতা-কর্মীদের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সচেতন থাকতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ আমাদের প্রত্যাশা। যথাযথ মানুষকে যথাযথ জায়গায় পদায়নে আমি ঘাটতি দেখেছি। এ জায়গায় সরকারকে কাজ করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিএনপির আন্দোলন যে কারণে ব্যর্থ হয়েছে, সে কারণে মানুষ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। তবে ক্ষমতায় আসার পর আর্থিক খাতে, ব্যাংকিং খাতে এবং শেয়ারবাজারে যে বিশৃঙ্খল অব্যবস্থাপনা ছিল তা যেন ফিরে না আসে, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। এর মধ্য দিয়েই স্থিতিশীল দেশ গড়া সম্ভব। এ ছাড়াও ‘নিড বেজড এডুকেশনে’র দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

ঢাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমাদের রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা দরকার। সর্বক্ষেত্রে যদি স্থিতিশীলতা থাকে, তাহলে আমার মনে হয় না, জনপ্রত্যাশার বাইরে কিছু হবে। ‘ভিশনারি লিডার’ হিসেবে শেখ হাসিনার প্রতি সবার আস্থা আছে। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং দেশে স্থিতিশীলতা থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির বলেন, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। সাংস্কৃতিক কর্মী নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, রাষ্ট্রের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য এর অঙ্গগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জরুরি। অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো নির্বাচনের সময় তামাশা করে; কীভাবে তাদের বার্গেইনিং পাওয়ার বাড়ানো যায়। পাঁচ বছর পরপর এ তামাশা বন্ধ করার একটা চিন্তা শুরু করা দরকার। ৭ জানুয়ারির পর যেন তা থেমে না যায়। বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, মানুষের প্রত্যাশা সরকার আইনের শাসন ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে সরকার উতরে যাবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজকে কাজ করতে হবে। সাংবাদিক অজয় দাসগুপ্ত বলেন, জনজীবনে স্বস্তি আনতে ব্যর্থরা যাতে মন্ত্রিসভায় স্থান না পান, সে বিষয়ে সরকারপ্রধানকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, নির্বাচন বর্জন রাজনৈতিক দলের অধিকার। কিন্তু ভোটাধিকার প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করা মানবাধিকার লঙ্ঘন। সাংবাদিক জ ই মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ম হামিদ, এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আশকারী, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ, আবদুল হান্নান, বিএসএমএমইউ-এর অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত, প্রকৌশলী এ কে এম হামিদ, ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

 

সর্বশেষ খবর