শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

সবার চোখ ঝুঁকিপূর্ণ রূপগঞ্জে

আইনশৃঙ্খলায় থাকবে বিজিবি র‌্যাব পুলিশের টিম, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদেরও আনাগোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাত পোহালেই ভোট। ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে থাকবে সবার বিশেষ নজর। থাকবে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আনাগোনা। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তার দায়িত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য মাঠে থাকবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মাহমুদুল হক। ভোট কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের মোবাইল টিম ও ম্যাজিস্ট্রেট।

আসন্ন নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে ১২৮ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টিকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। তবে নির্বাচনি বিভিন্ন সহিংসতার কারণে নৌকাবিরোধী প্রার্থীরা রূপগঞ্জের অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল থেকেই রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক গতকাল জানান, রূপগঞ্জে ভোট নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এর মধ্যে চার প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের দুটি টিম, আর্মড পুলিশের দুটি টিম, পুলিশের ১৩টি মোবাইল টিম ছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে চারটির বেশি। গতকালই একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও দুজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে রূপগঞ্জে চলছে টানটান উত্তেজনা। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) হটস্পটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেটলি প্রতীকের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। এ ছাড়া একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব সোনালি আঁশ প্রতীকের তৈমূর আলম খন্দকার। প্রচার শুরুর দিন থেকে একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটে রূপগঞ্জে। আসনটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তৈমূর আলম খন্দকার, শাহজাহান ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন প্রার্থী জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল ও রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহার রদবদলও দাবি করেন। নির্বাচন ঘিরে এলাকায় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসী জড়ো হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সম্প্রতি গোলাকান্দাইল থেকে গাজীর সমর্থক মাহফুজকে বিদেশি পিস্তলসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। নাওড়া, পোনাবসহ একাধিক স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহানের নির্বাচনি ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গুতুলিয়ায় কেটলি সমর্থকের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়। এর আগে কালনী বাজারে কেটলির ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রর শাহিন নামে এক বাস ড্রাইভারকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে নৌকার সমর্থকরা। কিছুদিন আগে গাজীর সমর্থক কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে কাঞ্চন বাজারে বড় বড় রামদা, চাপাতি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এক মিষ্টির দোকানে হামলা করে। কেটলি প্রতীকের গণসংযোগ করার সময় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে আহত করে গাজীর সমর্থক ডাকু শমসের মেম্বার ও তার বাহিনী। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলেছে নৌকার প্রার্থী গাজীর কর্মী-সমর্থকরা। গাজীর কর্মী-সমর্থকদের ভোটারদের মাঝে প্রকাশ্যে টাকা বিতরণের ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। এসব কারণে নির্বাচনি প্রচার শুরুর দিন থেকে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, জেলা নির্বাচন অফিস ও ঢাকা নির্বাচন কমিশনে মন্ত্রী গাজী ও তাঁর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ডজনখানেক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাই এ আসনে নির্বাচন ঘিরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান, তৃণমূল বিএনপির তৈমূর আলম খন্দকারসহ সবাই নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে গাজীর প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা করছেন।

শাহজাহান ভূঁইয়ার দুই নির্বাচনি ক্যাম্প ও সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর : স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কেটলি প্রতীকের দুটি নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে নৌকার সমর্থকরা। এ ছাড়া কাউসার নামে এক কেটলি সমর্থকের বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। উপজেলার ভোলাবো ইউনিয়নের পূবেরগাঁও এলাকায় গত রাত ৮টায় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, পূবেরগাঁও এলাকার নৌকার সমর্থক মুহিদ মোল্লা, আরমান, রাসেল, রুবেল, ফাহিম ও অজ্ঞাতনামা বহিরাগত আরও ৩৫/৪০ জন সন্ত্রাসী ধারালো বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূবেরগাঁও এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়ার কেটলি প্রতীকের দুটি নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর করে। এরপর কেটলির সমর্থক মজনুর বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা কেটলি মার্কায় ভোট দিলে নির্বাচনের পর ব্যবস্থা নেবে বলে হুমকি দিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের এ হামলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর