মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

এবার ভোটে জামানত হারালেন যত প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ভোট না পেয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন আলোচিত অনেক প্রার্থী। ভোটের আগে যাঁরা ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁদের অনেকেও এ জামানত রক্ষা করতে পারেননি। এ তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও। বিধি অনুযায়ী, মোট প্রদত্ত ভোটের অন্তত সাড়ে ১২ শতাংশ বা ৮ ভাগের ১ ভাগ না পেলে প্রার্থী জামানত হারান। জামানত হারানোর তালিকায় একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যও রয়েছেন। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-

সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে লড়ে পেয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৯২২ ভোট। ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের লাঙল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ৪২৯টি। তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জোটগত সমঝোতার ভিত্তিতে এ আসনটি জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে কোনো প্রার্থী ছিল না এখানে। এত কিছুর পরও ভোটের এ স্বল্পতা। এ ছাড়া জামানত হারিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার। নির্বাচনের শুরু থেকে নিজেকে শক্ত প্রার্থী দাবি করে আসছিলেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা। নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে তৃণমূল বিএনপির সোনালি আঁশ প্রতীকে নির্বাচন করে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট। জামানত বাঁচাতে প্রয়োজন ছিল অন্তত ২৬ হাজার ৫৭৮ ভোট। চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ১২৪ জন প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ৯৭ জন। চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ ও জাতীয় পার্টির সোলায়মান শেঠের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। শেঠকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রাম-১২ আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এম এ মতিনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম-৫ আসনে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম-১০ ও ১১ আসনে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদিনের জামানতও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যদিও নাজিম তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছেন। রংপুর-১ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা জাতীয় পার্টির হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ জামানত হারিয়েছেন। সিলেট-৬ আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরীর। একই আসনে জামানত হারিয়েছেন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনও।

এ ছাড়া জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে স্বতন্ত্র চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। মাহি পেয়েছেন ৯ হাজার ৯ ভোট। বগুড়া-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম জামানত হারিয়েছেন। খুলনার ছয়টি আসনের ৩৯ প্রার্থীর মধ্যে ৩০ জনই জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ছয়, তৃণমূল বিএনপির তিন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের চার, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এক, গণতন্ত্রী পার্টির এক, বিএনএমের তিন, জাকের পার্টির এক, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির দুই, ইসলামী ঐক্যজোটের এক, ওয়ার্কার্স পার্টির এক ও সাতজন স্বতন্ত্র। গাজীপুরের পাঁচ সংসদীয় আসনে অংশগ্রহণকারী ৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে বিজয়ী ও নিকটতম ছাড়া বাকি ২৮ জনই জামানত হারিয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে জামানত হারিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য তৃণমূল বিএনপির শাহীনূর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির তৌফিক আলী ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির তালুকদার মকবুল হোসেন। সিলেট-২ আসন থেকে বর্তমান এমপি মোকাব্বির খানসহ জামানত হারিয়েছে পাঁচজন। গণফোরামের মোকাব্বির খান উদীয়মান সূর্য প্রতীকে ১ হাজার ৯২২, তৃণমূল বিএনপির আবদুর মল্লিক সোনালি আঁশ প্রতীকে ৯৪৪, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী লাঙল প্রতীকে ৬ হাজার ৮৭৪, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির ডাব প্রতীকে ১৮৫ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মনোয়ার হোসাইন আম প্রতীকে ২৫৩ ভোট পান। এদের সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। সাতক্ষীরার চার আসনে ৩০ জন হয়েছিলেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির দুই, তৃণমূল বিএনপির চার, স্বতন্ত্র সাতসহ ২৩ জনই জামানত হারিয়েছেন। সাতক্ষীরা-১ আসনে জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন স্বতন্ত্র এস এম মুজিবর রহমান, মো. নূরুল ইসলাম, শেখ নুরুল ইসলাম ও শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. ইয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শেখ মো. আলমগীর ও তৃণমূল বিএনপির সুমি।

সাতক্ষীরা-২ আসনে প্রার্থী ছিলেন সাতজন। তাঁদের পাঁচজনই জামানত হারিয়েছেন। এঁরা হলেন স্বতন্ত্র আফসার আলী ও এনছান বাহার বুলবুল, তৃণমূল বিএনপির মোস্তফা ফারহান মেহেদী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আনোয়ার হোসেন, বিএনএমের মো. কামরুজ্জামান বুলু।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে ছয় প্রার্থীর পাঁচজনই জামানত হারিয়েছেন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির আলিপ হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবদুল হামিদ, জাকের পার্টির মো. মঞ্জুর হাসান, তৃণমূল বিএনপির রুবেল হোসেন ও বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের শেখ তারিকুল ইসলাম।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে সাত প্রার্থীর মধ্যে তৃণমূল বিএনপির আসলাম আল মেহেদী, জাতীয় পার্টির মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. শফিকুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শেখ ইকরামুল ও স্বতন্ত্র মো. মিজানুর রহমান জামানত হারিয়েছেন। ফরিদপুরের চার আসনে ২১ প্রার্থীর মধ্যে বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরসহ ১৩ জন জামানত হারিয়েছেন। ফরিদপুর-১ আসনে প্রার্থী ছিলেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে বিএনএমের শাহ মো. আবু জাফর, জাতীয় পার্টির মো. আক্তারজ্জামান খান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. নুর ইসলাম সিকদার জামানত হারিয়েছেন। ফরিদপুর-২ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জয়নুল আবেদীন বকুল মিয়া, ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে বিএনএমের গোলাম রব্বানী খান জামানত হারিয়েছেন। ফরিদপুর-৪ আসনে সাত প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন জামানত হারিয়েছেন। এরা হলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের নাজমুন নাহার, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মাকসুদ আহম্মেদ মাওলা, জাতীয় পার্টির মো. আনোয়ার হোসেন, তৃণমূল বিএনপির প্রিন্স চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মো. আলমগীর কবির। বগুড়া-৭ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র রেজাউল করিম বাবলু জামানত হারিয়েছেন। আরও জামানত হারিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির মো. আফজাল হোসেন, এনপিপির মো. আবদুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের নবাব মো. শামসুল হুদা এবং বিএনএফের নুরুল ইসলাম জেন্টু। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জাতীয় পার্টির মোহা. আবদুর রশিদ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুল্লাহ আল মামুন এবং বিএনএফের মো. আজিজুর রহমান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনএমের মোহাম্মদ আবদুল মতিন, বিএনএফের কামরুজ্জামান খান ও এনপিপির মো. নাহিদ আহমেদ। এ ছাড়া অনেক প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন।

 

সর্বশেষ খবর