রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীতে কাঁপছে দেশ

১৭৮ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় ভারতীয় প্লেনের জরুরি অবতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতে কাঁপছে দেশ

দেশে জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাতেও বাড়ছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে বিমান চলাচল। এ অবস্থায় গতকাল সকালে ১৭৮ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করেছে ভারতের একটি ফ্লাইট। এ ছাড়া সৈয়দপুরসহ দেশের আরও কয়েকটি বিমানবন্দরে অবতরণ বন্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টা। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই শীতের পাশপাশি আগামী বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দেশে বৃষ্টিও হবে।

এদিকে তীব্র শীতের কারণে দেশের বিভিন্ন জেলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল দিনভর দেশের অনেক জায়গায়ই সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এর ফলে ওইসব জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি ছিল। এমন অবস্থায় খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষজন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হননি। এমন শীতের কারণে সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষেরা। একই সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশে গতকাল সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে। এ ছাড়া নওগাঁর বদলগাছীতে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি, সৈয়দপুরে ৯ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ১৮-১৯ জানুয়ারি অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে গতকাল ভোর ৪টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে ভারতের মুম্বাই থেকে গুয়াহাটিগামী ইন্ডিগোর একটি বিমান। বিমানটিতে ১৭৮ জন যাত্রী ছিলেন। যাত্রা শুরুর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিমানটি গুয়াহাটিতে পৌঁছায়। ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘন কুয়াশার কারণে বিমানটি গুয়াহাটির বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারছিল না। এ সময় এটিকে ঢাকার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কুয়াশার কারণে গুয়াহাটির বিমানবন্দরের দৃশ্যমানতা এতটাই কমে গিয়েছিল যে পাইলট বিমানটিকে বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামাতে পারছিলেন না। বেশ কিছুক্ষণ আকাশে চক্কর দেওয়ার পর বিমানটিকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গতকাল ভোর ৪টায় ঢাকায় বিমানটি অবতরণ করে।

নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল সৈয়দপুর বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিমানবন্দরে ফ্লাইট অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারেনি। এতে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা ও নভোএয়ারের সাতটি ফ্লাইটের ঢাকাগামী চার শতাধিক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মধ্যে নীলফামারীতে গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর ১২টায় দৃষ্টিসীমা ছিল মাত্র ২০০ মিটার এবং ২টা ৩০ মিনিটে ছিল ১ হাজার মিটার। এর ফলে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট ওঠানামা করতে না পারায় শিডিউল বিপর্যয় হয়। দুর্ভোগে পড়েন চার শতাধিক ঢাকাগামী যাত্রী। তাদের মধ্যে শিশু এবং বৃদ্ধ যাত্রীও ছিলেন। বিমানবন্দর আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল বিমানবন্দর এলাকা। বেলা ৩টার দিকে কুয়াশা কেটে যাওয়ায় ফ্লাইট চলাচলের প্রয়োজনীয় দৃষ্টিসীমা চলে এলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়। একই সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডায় প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর-

বাগেরহাট : বাগেরহাটে তিন দিন ধরে হাড় কাঁপানো কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। এই অবস্থায় উপকূলীয় এই জেলার নদী বেষ্টিত জনপদ ও চরাঞ্চলসহ খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শীতের তীব্রতা বাড়ায় স্থবিরতা নেমে এসেছে সমুদ্র উপকূলীয় জনজীবনে। হাড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন চরাঞ্চলে বসবাসকারীরা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। একই সঙ্গে হাসপাতালে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

চুয়াডাঙ্গা : দুই দিন ধরে মৃদু শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে। হাড় কাঁপানো শীতে নাজেহাল হয়ে পড়ছেন জেলার শ্রমজীবী মানুষেরা। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা কম থাকলেও হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন বিপাকে। চার দিন ধরে দিনভর সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। ফলে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন মানুষজন।

বগুড়া : জেলায় শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত চার দিন কোথাও সূর্যের দেখা মিলছে না। রাতে এবং সকালে ঘনকুয়াশায় দূরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় বেড়েই চলছে শীতের তীব্রতা।

লালমনিরহাট : সাত দিন দেখা নেই সূর্যের। কনকনে ঠান্ডা আর সঙ্গে হিমেল বাতাসের দাপটে উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম।

দিনাজপুর : দিনাজপুরে শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়ায় দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষ শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

বরিশাল : বরিশালে হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যন্ত জনজীবন। গতকাল বরিশালে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। তীব্র শীতে বিশেষ করে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বিপাকে। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর