মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা বিএনপির

পর্যায়ক্রমে খুলছে সারা দেশের কার্যালয়

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা বিএনপির

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারের কঠোর অবস্থানে নিস্তেজ হয়ে পড়া বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে। কারাবন্দি নেতা-কর্মীদের মুক্ত করা, গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল, সর্বদলীয় ঐক্য গঠন, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ধরে রাখা, আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ বেশ কিছু কর্মকৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবছে দলের নীতিনির্ধারকরা। সার্বিক বিষয় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে বিএনপি। পর্যালোচনা শেষে পরবর্তী চূড়ান্ত করণীয় নির্ধারণ করবে। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষ গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী সরকারকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এ কারণে সব গণতন্ত্রকামী দলের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে রাজপথের আন্দোলন ফের জোরদার করবে। এ লক্ষ্যে দলমতনির্বিশেষে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই ভবিষ্যৎ কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে।

দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন পরবর্তী অনুষ্ঠিত দলটির নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সফলতা-ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কমপক্ষে পাঁচটি এজেন্ডা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বিএনপি জোটের আহ্বানে জনগণের ভোট বর্জন করাকে আন্দোলনের ‘নৈতিক বিজয়’ হিসেবে দেখা হলেও রাজপথের আন্দোলন কেন চূড়ান্ত সফলতা পেল না, কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল, তা নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা হয়। নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে জনগণ তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছে। দলটির হাইকমান্ডের দাবি, নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোটারের কম উপস্থিতি বিএনপির পক্ষে তাদের অবস্থানের বিশেষ বার্তা। যে কোনো মূল্যে এই জনসমর্থন ধরে রাখতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জিইয়ে রাখা হবে। তবে, অনেকে বিষয়টিকে শক্ত চ্যালেঞ্জ মনে করেছেন। এ লক্ষ্য অর্জনে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প কিছু ভাবছেন না তারা। নেতারা মনে করছেন, দেশের অর্থনৈতিক যে পরিস্থিতি, তাতে যে কোনো সময় গণআন্দোলন হয়ে যেতেও পারে। বিশ্বের অনেক দেশেই আকস্মিক আন্দোলনে অনেক সরকারকে বিদায় নিতে হয়। এ কারণেই সাধারণ ভোটারদের মনোভাব বুঝেই আগামীর কর্মসূচি প্রণয়ন করবে। এদিকে নিস্তেজ আন্দোলনে গতি ফেরাতে ৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সচল হয়েছে গুলশানের দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ও। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের কার্যালয় খোলা হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা নেতারা প্রকাশ্যে আসছেন। দলের যে সব নেতা কারাগারে আছেন তাদের মুক্ত করার জন্য আইনি প্রচেষ্টাও জোরদার করা হচ্ছে। এদিকে আগামী ১৯ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মদিন উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি নিতে পারে বিএনপি।

জানা যায়, কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। অন্য সব সিনিয়র নেতার কারামুক্তির পর পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে ঢাকায় সমাবেশের মতো কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। দলটির একাধিক নেতা মনে করছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতিবাচক বিবৃতিগুলো বিএনপির মূল দাবির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় তা আগামী দিনের আন্দোলনে সহায়ক হবে। পাশাপাশি পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়, সেই পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে দলটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি জনগণের ওপর আস্থা রেখেছিল। জনগণও বিএনপির ওপর আস্থা রেখেছে। সে কারণে জনগণকে স্যালুট জানাই। জনগণের এই আস্থার জায়গাটা ধরে রাখাই বিএনপির জন্য এখন মূল চ্যালেঞ্জ। নতুন সরকার নিয়ে আমরা মোটেও চিন্তিত নই। এই সরকার যে আগামী পাঁচ বছরই টিকতে পারবে তারই বা নিশ্চয়তা কী? কী হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রশ্নে বিএনপি আপস করবে না বলে তিনি জানান।

সর্বশেষ খবর