মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শীতার্তদের পাশে বসুন্ধরা

রূপগঞ্জের নাওড়ায় ১০ হাজার কম্বল বিতরণ

প্রতিদিন ডেস্ক

শীতার্তদের পাশে বসুন্ধরা

বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে গতকাল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়ায় ১০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর ও কুষ্টিয়ার শীতার্তদের মাঝেও বসুন্ধরা গ্রুপ কম্বল বিতরণ করেছে।

রূপগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বসুন্ধরা গ্রুপের উদ্যোগে ১০ হাজার শীতার্তের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার নাওড়া হাজী ইয়াদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। আরও উপস্থিত ছিলেন ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. লিয়াকত হোসাইন, বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আবু হেনা, ডিজিএম মো. রবিউল্লাহ, ডিজিএম মো. মাহবুবুল করিম, এজিএম মো. দেলোয়ার হোসেন, ম্যানেজার (ল্যান্ড) মো. ফাহিমুল ইসলাম ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা এখানে ব্যবসা করতে আসিনি। এসেছি আপনাদের পাশে থাকার জন্য। আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য। আপনাদের ভালো রাখার জন্য। আমরা জায়গা দখল করতে আসিনি। বসুন্ধরা গ্রুপ কারও জায়গা দখল করে না। প্রকৃত দাম দিয়ে কিনে নেয়, তাও যদি কেউ বিক্রি করতে চায়। এখানে জোরাজুরির কিছু নেই। বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষ ঠকানোর কাজ করে না। এটা আপনাদের জোর গলায় বলে গেলাম। বসুন্ধরা গ্রুপ এ এলাকার মানুষকে ভালো রাখতে চায়। বসুন্ধরা গ্রুপ যে শুধু এ এলাকায় কম্বল বিতরণ করছে এ রকম না। আজকের দিনে রংপুরে ২৫ হাজার, কুষ্টিয়ায় ১০ হাজার এবং সারা দেশে যেখানেই মানুষের কষ্ট হচ্ছে সেখানেই কম্বল বিতরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা বসুন্ধরা সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন না। আজকে কিছু কথা বলি। করোনার সময় আমাদের চেয়ারম্যান স্যার বললেন উত্তরবঙ্গের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে কী করবেন? তখন আমি বললাম খাদ্যসহায়তা দিতে চাই। আমাদের একটি সংগঠন রয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। যে সংগঠনে সারা দেশে প্রায় ২০ লাখ ছেলেমেয়ে কাজ করে। তাদের মাধ্যমে আমরা সব শুভকাজ করাই। আমাদের স্লোগান হচ্ছে শুভকাজে সবার পাশে। আমরা ভালো কাজে সবার পাশে থাকতে চাই। করোনার সময় চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশনায় আমরা উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ৪৮ হাজার পরিবারকে এক মাসের খাদ্যসহায়তা দিয়েছিলাম। যেখানে ২৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। বাংলাদেশে এমন কোনো শিল্পগ্রুপ নেই যারা সহায়তার জন্য এক মাসে এত টাকা খরচ করেছে। আমরা এখনো প্রতি মাসে ২৩ থেকে ২৪ কোটি টাকা মানুষের সহায়তায় খরচ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে, মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে। অতীতে এ এলাকায় বসুন্ধরার নাম ভাঙিয়ে অনেকে অনেক রকম করে গেছে। আপনারা যে কোনো বিষয়ে সরাসরি বসুন্ধরার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। বসুন্ধরায় কোনো মাঝের লোক নেই। সরাসরি বসুন্ধরার চেয়ারম্যান এবং আমরা যারা আছি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরা সারা দেশের অসহায় মানুষের মতো আপনাদের পাশেও আছি। আমরা সারা দেশে ৫০টি স্কুল করেছি যেখানে গরিব শিক্ষার্থীরা পড়ে। তাদের জামাকাপড়, বইখাতা সব দিই। আমরা ৫০টির ওপর ট্রেনিং সেন্টার করেছি যেখানে অনেক নারী সেলাই শেখে। প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর প্রত্যেক নারীকে একটি করে সেলাই মেশিন উপহার দিই। যা দিয়ে তারা সচ্ছল হওয়ার চেষ্টা করে। আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার অসহায় নারীকে বিনাসুদে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করেছি।’

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আপনাদের যার যে কোনো অসুবিধায় সরাসরি আমাদের বসুন্ধরায় চলে যাবেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারলে, ছেলেমেয়েরা পড়তে না পারলে আসেন পড়াশোনার দায়িত্ব আমরা নেব। এ এলাকার একটা ছেলে বা মেয়ে টাকার অভাবে পড়তে পারবে না এমনটা হবে না। দরকার হলে বসুন্ধরা গ্রুপ এ এলাকার ২ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যয় বহন করবে। আমরা বর্তমানে ৭ থেকে ১০ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়ার খরচ দিই। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসের ১ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে যায়। আমরা শত শত মানুষের চিকিৎসা করাই। দরকার হলে আপনারা খবর নেন, চিকিৎসা ও শিক্ষার জন্য সবার পাশে দাঁড়াই কি না। আমরা ব্যবসার জন্য সব জায়গায় যাই না। আমরা ব্যবসার বাইরে যে কাজগুলো করি তা প্রচার করি না। অনেকে অল্প কাজ করে অনেক প্রচার করে। আজকে অল্প করে বললাম। বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের পাশে কতভাবে দাঁড়ায় তা বলতে গেলে এক ঘণ্টায়ও শেষ করা যাবে না।’

বক্তব্যের শেষে তিনি আবারও যে কোনো প্রয়োজনে কায়েতপাড়ার বাসিন্দাদের পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ আছে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে একবার শুধু দাঁড়াবেন যে, আমার সংসার চলে না, চাকরি নেই, চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করাতে পারছেন না- কেউ খালি হাতে ফিরবেন না। আপনারা বসুন্ধরার সঙ্গে থাকবেন, বসুন্ধরা আপনাদের সঙ্গে থাকবে। আপনাদের সব ভালোমন্দ বসুন্ধরা দেখবে।’ ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, বসুন্ধরার ব্যবসা সারা বাংলাদেশে নেই, কিন্তু বসুন্ধরা গ্রুপ সারা বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে। এরই ধরাবাহিকতায় আজকে রূপগঞ্জে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আপনাদের এলাকার চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ আন্ডা রফিক বসুন্ধরার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করত। কিছুদিন আগে এখানকার একটি তিন তলা বাড়ি দখলে নিয়ে ভাঙা শুরু করলে বসুন্ধরার নজরে আসে। তার পর থেকে আন্ডা রফিকের সব অপকর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। আন্ডা রফিকের যে পরিমাণ দেনা রয়েছে, সেই দেনা শোধ করলে তার আবার আন্ডা (ডিম) বিক্রি করা লাগবে।

কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে নাওড়া হাজী ইয়াদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ ভূঁইয়া বলেন, ‘কঠিন শীতের সময় কম্বল বিতরণ বসুন্ধরা গ্রুপের সঠিক সিদ্ধান্ত। কিছু মানুষ বসুন্ধরার নামে জায়গা দখল করছে। নামটাও সবার জানা, সে হচ্ছে আন্ডা রফিক। এই পক্ষ এতদিন বসুন্ধরার ত্রাণ নিজের নামে চালিয়েছে। এখন আর সেই সুযোগ নেই।’

রংপুর : বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে গতকাল রংপুরের তিস্তা নদী বেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের উদ্যোগে রাজবল্লভ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

রাজবল্লভ বালাটারি এলাকার হোসেন আলী, মেছের আলী, জয়দেব এলাকার জিন্না বেগম, নুরনাহার কম্বল পেয়ে বলেন, তীব্র শীত ও কনকনে ঠান্ডায় যখন কাহিল এই সময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের কম্বল আমাদের খুব উপকার করল। আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের ভালো করেন।

শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ দীর্ঘদিন থেকে ভালো কাজ করে আসছে। শীতে কম্বল দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করছে। এ ভালো উদ্যোগের কারণে দরিদ্ররা উপকৃত হচ্ছে। এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখলে দেশের মানুষ আরও বেশি উপকৃত হবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর পিবিআই পুলিশ সুপার জাকির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর হাসান রুমি, বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজেদুল করিম, গজঘণ্টা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, বসুন্ধরার এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অসহায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। আশ্রয়ণ প্রকল্পে তীব্র শীতে জবুথবুভাবে বসবাসকারীরা কম্বল পেয়ে যেন বেঁচে থাকার উষ্ণতা পেয়েছেন। খুশিতে দোয়া করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে। গতকালের বিতরণ কার্যক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের দুজন চেয়ারম্যান অংশ নিয়েছেন। দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদর্গায় নুরুজ্জামান বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে গতকাল সকালেই পৌঁছে যায় বসুন্ধরার কম্বলবাহী গাড়ি। বসুন্ধরা শুভসংঘের দেওয়া কম্বল পেয়ে খুশি শীতার্তরা। তারা বলেন, এ শীতে খুব উপকার হলো। হোগলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম চৌধুরী বলেন, বসুন্ধরা যে তার এলাকার মানুষের কথা ভাবছে এটা অনেক বড় পাওয়া। এখন কম্বল দিচ্ছে। আগে সেলাই মেশিন দিয়েছে। বসুন্ধরার চেয়ারম্যানকে আন্তরিক ধন্যবাদ দেন তিনি।

গতকাল দুপুরে বসুন্ধরার কম্বল নিয়ে যাওয়া হয় ভারত সীমান্তের কাছে পাকুড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ফাঁকা মাঠের মধ্যে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে শীতে জবুথবু হয়ে বাস করছে আশ্রিতরা। তাদের দেওয়া হয় কম্বল। কম্বল পেয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের জন্য দোয়া করেন তারা।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওবায়দুল্লাহ ও স্থানীয় প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বসুন্ধরার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। দেশের অন্য শিল্পগ্রুপকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা। এর আগে খুব সকালে কুষ্টিয়া শহরের ১০০ হকারকে দেওয়া হয় বসুন্ধরার শীত উপহার। তারাও বসুন্ধরার চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরও সাহায্যের আবেদন করেন। বলেন, হকারদের উপার্জন কমে গেছে। সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে।

বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে মিরপুর ও ভেড়ামারায়ও কম্বল বিতরণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর