বুধবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
হার নিয়ে যত কথা

হারানো হয়েছে ষড়যন্ত্র করে

জামাল হোসেন মিয়া

ফরিদপুর প্রতিনিধি

হারানো হয়েছে ষড়যন্ত্র করে

ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়ার পরাজয়কে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন এ আসনের আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটার। ভোটের দিন সন্ধ্যার পর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে পাওয়া ১১৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭০টির ফলাফলে জামাল হোসেন মিয়াকে ৭১ হাজার ৬০১ ভোট দেখানো হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীকে ৫৯ হাজার ৮৫৩ ভোট দেখানো হয়। কিন্তু বাকি কেন্দ্রেগুলোর ফলাফল আটকে রেখে তিন ঘণ্টা পর জামাল হোসেন মিয়াকে ১ হাজার ৯০০ ভোটে হার দেখানো হয়। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলাফল প্রত্যাখ্যান ও কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া। আপিল করেন নির্বাচন কমিশন এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর।

নির্বাচনের পর দিন ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জামাল হোসেন মিয়া লিখিত বক্তব্যে অনিয়ম, কারচুপি, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট, প্রকাশ্যে নৌকায় সিল এবং পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষরবিহীন রেজাল্ট শিট তৈরির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে তার কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে।

জামাল হোসেন মিয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।

ফরিদপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া আপিল আবেদনে উল্লেখ করেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে থেকে ঈগল প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। প্রিসাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়। মৃত ও প্রবাসী অনুপস্থিত ভোটারদের সব ভোট নৌকা প্রতীকে নিয়ে নেওয়া হয়। কাইচাইল মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে নৌকা প্রতীকের সন্ত্রাসীরা পোলিং অফিসার অসীম শেখকে মারধর করে ভোটার লিস্ট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। সেখানে দুই ঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ফেলে। বেশ কিছু কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের মারধর করে বের করে দিয়ে নৌকায় সিল মারে। জামাল হোসেন মিয়া আবেদনে আরও জানান, এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রিসাইডিং অফিসারকে বারবার বলা হলেও তারা পদক্ষেপ নেননি। বেশ কিছু কেন্দ্রে আমার পোলিং এজেন্টদের স্বাক্ষর ছাড়া নিজেদের মতো রেজাল্ট শিট তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসন। সালথা উপজেলার সহকারী রিটার্নিং অফিসার কন্ট্রোল রুমে না গিয়ে তার অফিসে বসে নেটওয়ার্ক নেই- অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্রভিক্তিক ফলাফল জনসম্মুখে ঘোষণা না করে প্রায় দুই ঘণ্টা আমাকে বসিয়ে রেখে নৌকা প্রতীকের পক্ষে রেজাল্ট শিট তৈরি করে। তারপর সেটি আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। যা সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফরিদপুর-২ আসনে বিপুল জনপ্রিয় স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া। নগরকান্দা-সালথা উপজেলার বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ নেতা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ও গ্রাম্য মাতুব্বরেরা জামাল মিয়ার পক্ষে। ভোটের আগে থেকেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয় জামাল মিয়ার পক্ষে। ভোটের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলে। দুপুরের পর থেকে সালথা উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট পড়ার অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেন মিয়া ও তার এজেন্টরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের কোনো কথাই শোনেননি প্রিসাইডিং অফিসার। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল হোসেনের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। এমনকি কয়েকটি কেন্দ্রে ফলাফল শিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী এজেন্টদের স্বাক্ষর না থাকলেও সেই রেজাল্ট শিট গণনায় ধরা হয়। নির্বাচনের সময় এসব বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও তার কোনো ব্যবস্থা নেননি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা।

 

সর্বশেষ খবর