বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ছয় বিভাগে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে

ঘন কুয়াশায় ফেরি দুর্ঘটনা নামতে পারেনি ১১টি ফ্লাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয় বিভাগে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে

শীতে কাঁপছে দেশ। রাজধানীর সদরঘাট থেকে তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

এক দিনের ব্যবধানে নতুন করে পাঁচ জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। এতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে ছয় জেলা। এর মধ্যে গতকাল বান্দরবানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শুধু সিলেটের শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমেছিল।

এদিকে রাত থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকছে সারা দেশ। কুয়াশায় গতকাল সকালে পাটুরিয়ায় একটি ফেরি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যানবাহনসহ ডুবে গেছে। এতে নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এ ছাড়া কুয়াশায় রানওয়ে দেখতে না পেয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি ১১টি ফ্লাইট। ফ্লাইটগুলো সিলেট, চট্টগ্রাম, ভারতের হায়দরাবাদ ও কলকাতা বিমানবন্দরে গিয়ে অবতরণ করে। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বান্দরবানে ৯.৪ ডিগ্রি, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৯.৮ ডিগ্রি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯.৬ ডিগ্রি, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ৯.৫ ডিগ্রি, চুয়াডাঙ্গায় ৯.৮ ডিগ্রি ও বরিশালে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। অন্যান্য জেলায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলে হিমেল হাওয়ার কারণে ছিল হাড়কাঁপানো শীত। অধিকাংশ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রির নিচে। তবে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে, যা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হতে পারে বিমান, নৌ ও সড়ক যোগাযোগ। তবে আজ ও আগামাীকাল রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ২০ জানুয়ারির পর শীত আরও বাড়তে পারে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতের চিত্র-

নীলফামারী : কুয়াশায় টানা নয় দিন দেখা নেই সূর্যের। শীতে কাবু হয়ে পড়েছে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। ঘন কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে হাসপাতালগুলোয়।

দুমকী (পটুয়াখালী) : ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে প্রত্যন্ত জনপদ। গতকাল দুপুর ১২টায়ও দেখা মেলেনি সূর্যের। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে দুর্ভোগে রয়েছে নদীতীরবর্তী এলাকা ও চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। উপজেলা হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোয় বেড়েছে শীতজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা। দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর শহীদুল হাসান শাহীন বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে শীতজনিত রোগের উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী আসছে। হাসপাতালে শয্যার চেয়ে এখন রোগী বেশি।

কুড়িগ্রাম : ঘন কুয়াশা কমে গেলেও কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। সাত দিন পর গতকাল দুপুরে সূর্যের একটু দেখা মেলে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দিন দিন কমছে বলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী মানুষ হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর জিগামারী ঘাট এলাকার কৃষক জলিল মিয়া জানান, নদীপারের ঠান্ডা বাতাসে বোরোর বীজ নিয়ে সংকটে পড়েছি। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বোরো বীজতলা ও সদ্য বেড়ে ওঠা আলু খেতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

বরিশাল : মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে বরিশালে। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বেরোচ্ছে না কেউ। দিনমজুর শ্রেণির মানুষ পড়েছে মহাবিপাকে। শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে নামতে হচ্ছে তাদের।

চুয়াডাঙ্গা : এক দিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কমেছে প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ১২.৬ ডিগ্রি। বৃষ্টির মতো ফোঁটা ফোঁটা পড়ছে ঘন কুয়াশা। সঙ্গে যোগ হয়েছে উত্তরের হিমেল হাওয়া। চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা জানান, দুই ধাপে ২৪ হাজার ৩০০ সরকারি কম্বলের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যেগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে।

পঞ্চগড় : প্রচণ্ড ঠান্ডায় ভালো নেই জেলার কর্মজীবী খেটে খাওয়া নারীরা। প্রতিদিন ঠান্ডা উপেক্ষা করে শাড়ি অথবা ম্যাক্সির ওপর একখণ্ড শীতের কাপড় চাপিয়ে বের হচ্ছেন কাজে। অনেকের কোনো শীতের কাপড় নেই। জেলার প্রায় ২০ হাজার নারী পাথরশ্রমিকের কাজ করে। অনেকে জড়িত কৃষিকাজে। কেউ কেউ হোটেলে বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ করে। ১০ থেকে ১৫ হাজার রয়েছে নারী চা শ্রমিক। শীতের তীব্রতা গায়ে মেখেই কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বাড়তি শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই অনেকের। তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরের ডাক্তারপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম পাথরভাঙা (ক্র্যাশিং) মেশিনে কাজ করে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতেন। বর্তমানে কাজ নেই। তিনি বলেন, ‘ঠান্ডায় হাত-পা জড়ো হয়ে আসে। জিনিসপত্রের যে দাম খাব নাকি কাপড় কিনব? আমার দুই মেয়ের জন্যও কিছু কিনতে পারিনি।’

লালমনিরহাট : মাঘ মাস আসার পরই উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে জেঁকে বসেছে শীত। সূর্যের দেখা মেলেনি গত ১১ দিনেও। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতনিবারণে অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গতকাল লালমনিরহাটে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা এ বছর জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর