দেশে নারী নির্যাতনের মাত্রা কিছুটা কমলেও ১৮ বছরের কম বয়সীদের ওপর নির্যাতন, বিশেষ করে স্বল্পবয়সীদের আত্মহত্যার ঘটনা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত কয়েক মাসে দেশে নারী সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, এসিড নিক্ষেপ ও যৌতুকের কারণে নির্যাতনের ঘটনা কমলেও পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে স্বল্পবয়সী তথা শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যে, ২০২৩ সালের ১২ মাসে মোট ৪৩৬ জন নারী ধর্ষণের এবং মোট ১৪২ জন নারী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এ সময় এসিডদ্বগ্ধ হন মোট ১০ জন নারী। যৌতুকের কারণে ১৪২ জন নারী নির্যাতিত হন। আর পারিবারিক সহিংসতার কারণে ওই বছর ৫০৭ জন নারীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অন্যদিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১২ মাসে মোট ৮৯ জন শিশু আত্মহত্যা করে। আর এ সময় শিক্ষকের দ্বারা শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। মোট ২৪০ জন শিশু শিক্ষকের মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়। ২০২৩ সালে শিশুর শারীরিক নির্যাতনের হারও এর আগের বছরের তুলনায় বেশি। সে বছর ১২৭ জন শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। ২০২৩ সালে যৌন হয়রানির শিকার হয় ৫৮ জন শিশু। ২০২৩ সালে ধর্ষণের শিকার হয় ৩১৪ জন। আর ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৯ শিশুকে। এ ছাড়া সে বছর শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় ৮৯ জনকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকের কারণে অনেক শিশু আত্মহত্যা করেছে। শিশুরা একটু স্পর্শকাতর হয়। আর সব শিশুর মানসিক অবস্থাও এক না। অর্থনৈতিক কারণে মা-বাবাকে ঘরের বাইরে কাজে যেতে হয়। আবার অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে অভিভাবকরা সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে সন্তান যখন ভুল পথে চলে যাচ্ছে, পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে তখন তারা আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যা করছে। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারী ধর্ষণ ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনাগুলো কমে এলেও পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এর কারণ, আমাদের সমাজে ছেলেমেয়ের যখন বিয়ে হয় তখন কোনো কাউন্সিলিং থাকে না। সংসার করার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার এবং কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ও দিতে হবে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে যে মনোযোগ একজন স্বামী বা স্ত্রীর তার সংসারের জন্য দেওয়ার কথা তা তারা দিতে পারছেন না। আবার টিভিতে বিভিন্ন সিরিয়াল দেখার জন্য অনেকে ব্যস্ত থাকেন। পুরুষরাও মোবাইলের অতিরিক্ত আসক্তির কারণে নেতিবাচক বিষয়ে জড়িয়ে পড়ছেন। এ বিষয়গুলো দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় পারিবারিক সহিংসতার মাত্রাও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কর্মজীবী নারীদের ঘরের বাইরের কাজ করার পাশাপাশি মনে রাখতে হবে যে ঘরে তার সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ সন্তানরা মাকে বেশি কাছে চায়। আবার বাবারও দায়িত্ব তার স্ত্রী কর্মজীবী হলে তাকে সহায়তা করা এবং সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।