রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্থলবন্দর অচলের হুমকি ব্যবসায়ীদের

♦ শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে পাথর আমদানি বন্ধ ♦ আজকালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে সব ধরনের পণ্য আমদানি

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বর্ধিত আমদানিশুল্ক নিয়ে মুখোমুখি সিলেটের ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। দাবি আদায় না হওয়ায় আজকালের মধ্যে সিলেটের সব স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশন দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধের হুমকি দিয়েছেন তারা। পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সরকার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বিভিন্ন খনি থেকে উত্তোলিত পাথর ও চুনাপাথর সিলেটের বিভিন্ন স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশন দিয়ে আমদানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সীমান্তের অদূরে খনিগুলো হওয়ায় পরিবহন খরচ কম পড়ে। তাই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের স্থলবন্দর দিয়ে আসা পাথর ও চুনপাথারের চেয়ে কম দামে সিলেট দিয়ে আমদানি করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। ফলে দেশের অন্যান্য শুল্কস্টেশনের চেয়ে কম শুল্ক (ইম্পোর্ট অ্যাসেসমেন্ট রেট) দিতেন সিলেটের আমদানিকারকরা। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বছরের আগস্টের দিকে সারা দেশের মতো সিলেটেও একই হারে শুল্ক নির্ধারণ করে। অ্যাসেসমেন্ট রেট সাড়ে ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ ডলার করার মৌখিক নির্দেশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এতে বেঁকে বসেন ব্যবসায়ীরা। বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবিতে তারা কিছুদিন পাথর ও চুনাপাথর আমদানি বন্ধ রাখেন। পরে সমঝোতার ভিত্তিতে শুল্ক ১১.৭৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়। চার মাসের ব্যবধানে গত ৪ জানুয়ারি সিলেট অঞ্চলের স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশনগুলো দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা বোল্ডার পাথর, ভাঙা পাথর ও চুনাপাথরের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করতে সিলেট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারকে নির্দেশ দেয় এনবিআর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জানুয়ারি থেকে বর্ধিত শুল্কারোপ শুরু হয়। এনবিআরের নির্দেশে আরও ২ ডলার করে বাড়তি শুল্কারোপ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার মাসের ব্যবধানে ফের শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা সিলেটের দুটি স্থলবন্দর ও পাঁচটি শুল্কস্টেশন দিয়ে ভারত থেকে সব ধরনের পাথর আমদানি বন্ধ করে দেন। এরপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা কয়েক দফা বৈঠক করেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় পাথর আমদানিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সিলেট বিভাগীয় স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশনের ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন জানান, চার মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো শুল্ক বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সারা দেশের সঙ্গে সিলেটে স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানির তুলনা করলে চলবে না। কারণ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাথর ও চুনাপাথর খনিগুলো সিলেটের অনতিদূরে। তাই পরিবহন খরচ কম হওয়ায় আমদানিও হয় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কম মূল্যে। তাই স্বভাবতই অ্যাসেসমেন্ট রেট কম হবে। কিন্তু এনবিআর সেটা বুঝতে না পেরে সারা দেশে এক রেট করতে চাচ্ছে। বাড়তি শুল্ক দিয়ে আমদানি করলে সিলেটের আমদানিকারকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তাই তারা আমদানি বন্ধ রেখেছেন। বিষয়টি দেশের ব্যবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন এফবিসিসিআইকেও অবগত করা হয়েছে। সমস্যার সমাধান না হলে দু-এক দিনের মধ্যে সিলেটের সবকটি স্থলবন্দর ও শুল্কস্টেশন দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর