রবিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তরে ফের শৈত্যপ্রবাহ রাজশাহীতে সব স্কুল বন্ধের ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

এক দিনের ব্যবধানে নতুন করে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও মৌলভীবাজার জেলা। পঞ্চগড়ে কাগজে-কলমে শৈত্যপ্রবাহ কাটলেও গতকাল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রিতে নামলেই তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এদিকে শীতের কারণে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ। ডায়রিয়া, সর্দি, কাঁশি, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীতে ভরে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালগুলো। মৃত্যুও হচ্ছে অনেক রোগীর। অধিকাংশ রোগী শিশু ও বৃদ্ধ। জরুরি রোগীদের উপজেলা হাসপাতাল থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে জেলা সদরে বা ঢাকায়। আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের শুধু দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হলে বাকি সব জেলাতেই তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। গতকাল রাজশাহীতে ৯.৮ ডিগ্রি, নওগাঁর বদলগাছীতে ১০ ডিগ্রি ও দিনাজপুরে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সারা দেশের রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে শীত বাড়তে পারে দিনে। ২২ জানুয়ারির পর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিভিন্ন এলাকায় শীতের চিত্র-

রাজশাহীতে তীব্র শীতে সব প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ ঘোষণা : শীতের তীব্রতা বাড়ায় রাজশাহীতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাতে রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিকের উপ-পরিচালক পৃথক এ ছুটি ঘোষণা করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু ২১ জানুয়ারি বন্ধ থাকবে। তবে দিনের তাপমাত্রা যদি না বাড়ে তবে আবার নতুন করে পরবর্তী ঘোষণা দেওয়া হবে। রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিকের উপ-পরিচালক ডা. শারমিন ফেরদৌস চৌধুরীর সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাওয়ায় রবিবার ও সোমবার (২১ ও ২২ জানুয়ারি) রাজশাহীর মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

লালমনিরহাট : শীতের কারণে জেলায় বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগ। হাসপাতালের আউটডোরে চিকিসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু। শুধু আউটডোরেই নয়, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডটি ১০ শয্যার হলেও বর্তমানে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে ২০ শিশু রোগী। গতকাল এক দিনেই ভর্তি হয়েছে ছয়জন রোগী। রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কুড়িগ্রাম : গত দুই দিন ধরে কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেও ঠান্ডার প্রকোপ কমেনি। হাঁড়কাঁপানো শীতে নাজেহাল জেলাবাসী। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়, যা আগের দিনের চেয়ে ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। তবে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল সকালেও প্রচ কুয়াশায় ঢাকা ছিল গোটা জনপদ। বেলা ৩টার দিকে সূর্যের আলো দেখা গেলেও উত্তাপ ছিল না। সকাল ৯টায় শহরের গোড়স্থানপাড়ায় অপেক্ষারত শ্রমিক নবিদুল মিয়া ও জলিল মিয়া বলেন, ঠান্ডার কারণে কাজে যেতে পারছি না। সর্দি-কাশি লেগেই আছে। তাও পেট চালাতে বের হওয়া লাগে। বেলা উঠলে কাজে যাওয়ার চিন্তা করব।

দিনাজপুর : উত্তরের জেলা দিনাজপুরে মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে কাহিল মানুষ। তবে অনেক দিন পর গতকাল দুপুরে সূর্যের দেখা মেলায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি আসে। হাটবাজার ও গ্রামগুলোয় কর্মব্যস্থতা দেখা যায়। সেই সঙ্গে গৃহিণীরা কয়েক দিনের জমানো কাপড় ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এদিকে শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।

শীতে কৃষিশ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। দিনাজপুর সদরের শঙ্করপুর গ্রামের ফসলের মাঠে গৌতম দাস বলেন, বেজায় (খুবই) জার (শীত), এই জারত কাম করিতে হাত-পাও গেলা থোপসা হই আইসেছে। কী করিমো, কাম না করিলে হামার ভাতও হয় না। আর এই জারত কাম করিতেও বেজায় কষ্ট হচে।

সর্বশেষ খবর