সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার - ড. আবদুস শহীদ, কৃষিমন্ত্রী

কৃষক ও কৃষি বাঁচলে আমরা বাঁচব

ওয়াজেদ হীরা

কৃষক ও কৃষি বাঁচলে আমরা বাঁচব

নতুন সরকারের কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুস শহীদ বলেছেন,  দেশের কৃষক বাঁচলে, কৃষি বাঁচবে। কৃষক ও কৃষি বাঁচলে আমরা বাঁচব। সে কারণে দেশের স্বার্থে কৃষক ও কৃষিকে সম্মানজনকভাবে সুরক্ষা দেওয়াই হলো প্রথম চ্যালেঞ্জ। আমি মনে করি আমি জনগণের চাকর। আমিসহ কৃষিতে যেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত সবাই কৃষকের চাকর।

গতকাল মন্ত্রণালয়ের নিজ দফতরে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনের টানা সাতবার সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আবদুস শহীদ।

সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী কৃষির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাজের পরিধি অনেক বড়, চ্যালেঞ্জও অনেক। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা মোকাবিলা করা অসম্ভব কিছু নয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সবাইকে নিয়ে কৃষির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কৃষক যেন তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পান তা নিশ্চিত করা। কৃষক যেন তার যথাযথ সম্মান পান। আমরা কৃষক ও কৃষির সব সেক্টরকে আধুনিকায়ন করে প্রধানমন্ত্রী আহ্বান বাস্তবায়ন করব। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা, তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের নানা কার্যক্রম সম্পর্কে এখন অবহিত হচ্ছি। জ্ঞান অর্জন করছি। এখন আমার সব ধ্যান জ্ঞান হলো কৃষি নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ কৃষিনির্ভর। মন্ত্রণালয়ের পরিধি বড়, কাজকর্ম অনেক, আবার চ্যালেঞ্জ বেশি। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আমরা করব। চ্যালেঞ্জ দুই ধরনের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকদের যত বেশি চাষাবাদের আওতায় আনা যাবে ততই কৃষকদের মঙ্গল। জাতির মঙ্গল হবে। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পরে যেমন- বন্যা, খরা সিডর ইত্যাদি কারণে আমাদের কৃষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা  এখন অনেক উন্নতি হয়েছে।

কৃষি ও কৃষকের সমস্যা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, কৃষিতে উৎপাদন যে পরিমাণ হয় সেটির যথাযথ সংরক্ষণাগার অভাব রয়েছে। এ বিষযে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই আমাদের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ফসল সংরক্ষণের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন এগুলো করতে বলেছেন। লোকবলের ক্ষেত্রে অনেক সময় কাজ করতে অসুবিধা হয় সে কারণে লোকবল নিয়োগে কোনো আপত্তি নেই সে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়াও প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ভর্তুকি মূল্যে অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে অনেক ফসল আবাদ এখন সহজ হয়ে গেছে। আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে আমার এলাকার অনেক বিভিন্ন সময় কৃষকদের সঙ্গে উঠান বৈঠক করেছি, কথা বলেছি। কৃষকদের কথা শুনতে ভালো লাগে। তাদের সুবিধা বা অসুবিধা কী সেগুলো আমি আগে থেকে অনেক জানি, কাছ থেকে জেনেছি।

মন্ত্রী বলেন, এলাকায় গিয়ে যুবসমাজের উৎসাহ দেখে মনে হয়েছে এদের যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে একেবারে মুক্তি পাব। সেকারণে কৃষিকে সম্মানজনক পেশা মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যেন কৃষি কাজে আগ্রহী হন। তা করা সম্ভব হলে দারিদ্র্য বিমোচনের যে বিষয়টা আছে, তা আরও এগিয়ে যাব। অতি দরিদ্র হার একেবারেই কমে যাবে। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা যেন অবহেলিত না থাকেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. শহীদ বলেন, আমাদের ব্লক সুপারভাইজার যারা অর্থাৎ উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ অনেক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি আমার কথা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করে বলেছি আপনাদের যে মেধা আছে, যে যোগ্যতা আছে, তাকে কাজে লাগাতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের বলেছি, আপনাকে মনে করতে হবে আমি জনগণের চাকর। কৃষিতে আমি কৃষকের চাকর। তাহলে কর্মকর্তা নিজেও উপকৃত হবেন। কর্মকর্তাদের মাধ্যমে দেশের কৃষকরা উপকৃত হবে। মন্ত্রী বলেন, কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে সবার জন্য দরজা খোলা।  সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন যারা আছেন তারা কৃষকের সেবার জন্যই তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়ন ছাড়া এ দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কৃষক ও কৃষি নিয়ে কোনো রকম দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর